ভোগালী বিহু

শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে অসমের গ্রামে গ্রামে শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। ব্যস্ততা বাড়ে মাঠের মানুষদের।  ব্যস্ততাটা শুধু মাঠে থাকে থাকে সঙ্গে ‘বাটে’ও।  বাড়ির ভিতর থেকে ভেসে আসা ঢেকির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।  বিশেষ করে মহিলাদের।  ধান মাঠ থেকে বাড়িতে এলেই শুরু হয়ে যায় উৎসবের তোড়জোড়।

সারা বিশ্বের অসমীয়া মানুষ মেতে ওঠে মাঘ বিহু উৎসবে। অসমের অন্যতম বড় পরব।  মূলত কৃষি উৎসব।  মাঘ মাসের শুরুতে মকর সংকরান্তি তিথিতে। তাই এই উৎসবের নাম ‘মাঘ বিহু’।  কিন্তু একাধিক নাম আছে এই পরবের।

Read Also :  Hairstyle: হেয়ার স্প্রে চুলের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর?

মাঘ মাসের বিহু উৎসবে দেবতাকে ‘ভোগ’ দেওয়া হয় সেই সূত্রেই ‘ভোগালী’ শব্দটি এসেছে। ‘মাঘ দোমাহি’ও বলা হয়ে থাকে। মাঘ বিহু শুরু হয় ‘পুহ’ মাসের শেষ দিন থেকে। 

 উৎসব শুরু হয় ‘উরুকা’ দিয়ে। ধান  কাটা হয়ে গেলে ফাঁকা মাঠ। সেখানেই নতুন বাঁশ, কলাপাতা একত্র করে কুঁড়ে ঘর বা পিরামিডের আকারে তৈরি করা হয়। বাঁশ-কাঠের তৈরি এই ঘরকে বলা হয় ‘ভেলাঘর’ বা ‘মেজি’। ভেলাঘরেই পরিবারের সকলে মিলিত হয়ে নানা ধরনের অসমিয়া পদ রান্না করা হয়।

 

   bihu-2

পিঠে, তিলের লাড্ডু,  মুরমুরা বা চালের লাড্ডু, নারকেল নাড়ু।  চাল, গুড় আর দই দিয়ে তৈরি ‘সন্দহ গুরি’ মাঘ বিহু উৎসবের অন্যতম অঙ্গ। পরিবারের সমস্ত সদস্যরা  এক সঙ্গে মিলিত হন। ঐতিহ্যবাহী পুরনো পদ রান্না হয় এক সঙ্গে। তবে সে সব পরের দিনের জন্য।

bihu-6

পরের দিন সকালে পরিবারের প্রতিটি সদস্য, গ্রামের প্রতিটা মানুষ খুব  ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়েন।  স্নান সেরে ‘ভেলাঘর’- এর সামনে এসে উপস্থিত হন।  পুজো ও প্রার্থনা চলে। তারপর করা হয় অগ্নি সংযোগ।  গোটা মুরগী, চালের পিঠে, দই, চিঁড়ে, পিঠে নিবেদন করা হয় অগ্নি দেবতাকে। উদ্দেশ্য অসূয়া এবং অশুভর নাশ করা। উপাচারের  সঙ্গে থাকে চালের তৈরি মদ্য।  

bihu-4

মেজি পরবের প্রসাদ শীতের বিভিন্ন রকম নতুন আলু।  রাঙা আলু, বড় আলু, ছোট আলু, গুঁড়ি আলু।  লোকবিশ্বাস, এই প্রসাদ খেলে সারা বছর রোগ থকে রক্ষা পাবে মানুষ।  

bihu-1

এখন অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাজি উৎসবে লেগেছে থিমের হাওয়া।  কুঁড়ে বা পিরামিড শেপের বদলে নানা রকম থিম।  এক এক গ্রামে এক এক রকম আকারের ‘মাজি’ বা ‘ ভেলাঘর তৈরি হয়।  মানুষের দেখার জন্য বেশ কয়েকদিন থাকে।

অসমের প্রায় প্রতিটা বাড়িতে ‘মাজি’ পালন করা হয়।

bihu-5

কিছু কিছু গ্রামে বিহু উপলক্ষে ষাঁড়ের লড়াই আয়োজন করা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও আবার চলে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। অসমিয়া সংস্কৃতির মূল সুরকে তুলে ধরা হয়। বাঁধা হয় নতুন গান।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...