আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জন্যে আশুভোগ সন্দেশ বানিয়েছিলেন ভীম নাগ

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, তদানিন্তন বঙ্গ সমাজ ভালবেসে তাঁকে বাংলার বাঘ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। আদ্যন্ত রাসভারী মানুষের আড়ালেও তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী। নিজের কর্মজীবনে বহুবিধ দায়িত্ব সামলেছেন। কলকাতা হাইকোর্ট আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে একই পারদর্শীতার সঙ্গে সমালে গিয়েছেন পরাধীনতার যুগে।

১৮৮৮ সালে আশুতোষ কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯০৪ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত; দীর্ঘ ১৯ বছর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯২০তে কিছু দিনের জন্যে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। দু'দফায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখন গোলদিঘির গোলামখানা তকমা জুটেছে, মাধববাবুর বাজারে তৈরি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি ব্রিটিশদের চাকর তৈরি হয়। সেই ইমেজ ঘুচিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃত গৌরব ফেরালেন আশুতোষ। এত কিছুর মধ্যেই নিজের বাঙালিয়ানাকে কখনও হারাননি স্যর আশুতোষ।

বাংলা ভাষাকে ইংরেজির সমান মর্যাদা দেওয়ার জন্য লড়েছেন। শেষ অবধি সমমর্যাদা আদায় করেছেন বাংলার জন্য। আদালত ছাড়া বাকি সময় ধুতি-চাদর, বাঙালির বেশেই দেখা যেত তাঁকে। মহাবোধি সোসাইটিতে বুদ্ধের পূতাস্থি প্রতিষ্ঠার দিন গোটা শহর দেখেছিল ধুতি পরে, খালি গায়ে, খালি পায়ে কলকাতার রাজপথে হাঁটছেন পরাধীনতা পীড়িত বাঙালির অহঙ্কার স্যর আশুতোষ। কেতাদুরস্থ বাঙালির মতো তিনিও ছিলেন ভোজনরসিক। তবে তিনি ছিলেন নিরামিষাশী। যেকোনও নেশা থেকে শত হস্ত দূরে থাকতেন। চা, এমনকী পানও খেতেন না। তবে প্রিয় ছিল মিষ্টি।

মিষ্টির মধ্যে ভালবাসতেন সন্দেশ। ভীম নাগের সন্দেশ ছিল তাঁর প্রিয়। তাঁর নামের সঙ্গে যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছিল ভীমচন্দ্র নাগের সন্দেশ। বেশির ভাগ দিনই তিনি ভীম নাগের দোকান থেকে সন্দেশ কিনতেন। এছাড়াও নতুন বাজারের মাখনলাল দাসের দোকান থেকেও সন্দেশ কিনতেন। স্যর আশুতোষ একটা দুটো সন্দেশ খেতেন না, শোনা যায় পেল্লাই পাঞ্জা ছিল তাঁর, হাতের মুঠোয় এক একবারে যত সন্দেশ উঠত তাই মুঠো ভরে খেতেন। ধামা করে সন্দেশ যেত তাঁর জন্য। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সবচেয়ে প্রিয় ছিল কড়াপাকের সন্দেশ। যার পাকে রকমফের ঘটিয়ে ভীমচন্দ্র নাগ তৈরি করেন আশুভোগ নামের এক ধরনের সন্দেশ। নিয়মিত খদ্দের স্যর আশুতোষের জন্য বানানো আশুভোগ সন্দেশ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আদপে এটি বিংশ শতকের ট্রেন্ড, স্মারক মিষ্টি। এমনই মতিলাল নেহেরুর জন্য তৈরি হয়েছিল নেহেরুভোগ, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্য সুভাষভোগ, মাদার টেরেজার জন্য মাদার ইন্ডিয়া, লেডি ক্যানিংয়ের জন্য লেডিক্যানি ইত্যাদি। বরেণ্য ও স্মরণীয় ব্যক্তির স্মরণে এভাবেই একের পর এক মিষ্টির জন্ম দিয়েছেন বাঙালি ময়রারা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...