ভাইফোঁটা স্পেশ্যালঃ প্যান্থারাস ও হাঁড়িবন্ধ পাঁঠার দম

ভাইফোঁটার খাওয়াদাওয়া

“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা”-  সেই কোন আদিকালে যমরাজের বোন যমুনার অনেকদিন না - দেখা ভাইয়ের জন্য আকুলতা দূর করতে স্বয়ং যমরাজ  এসেছিলেন বোনের কাছে। সে দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষ। বোন যমুনা দাদা যমরাজের কপালে ফোঁটা দিয়ে তার মঙ্গলকামনা করেছিল। সেই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা ভারতের নানা প্রান্তে কোথাও ভাইফোঁটা, কোথাও ভাইদুজ, কোথাও ভাইটীকা ইত্যাদি পালন করা হয়। ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় শুধু ফোঁটা নয় তার সঙ্গে থাকে খাওয়াদাওয়ার জমাট আয়োজন। সাবেক পূর্ববঙ্গের কোনো কোনো অঞ্চলে প্রতিপদে ফোঁটার আয়োজন থাকলেও খাওয়াদাওয়ার জন্য নির্ধারিত হত দ্বিতীয়ার দিনটি। ভাইফোঁটায় অভিনব কী আয়োজন করা যায় এ ভাবনা সব বোনের। সেই সমস্যা সমাধান করতে চাইলে পড়তেই হবে আজকের রেসিপি।

pantheras

প্যান্থারাস

এক আশ্চর্য আবিষ্কার এই প্যান্থারাস। চট্টগ্রামের বাবুর্চিদের রন্ধননৈপুণ্যের এবং অভিনবত্বের পরিচয় বহন করে এই প্যান্থারাস। ভাই-এর সঙ্গে মারপিট ঝগড়া সবই চলছে? বড় হয়েও? তাহলে তো ভাইফোঁটায় অভিনব এই পদটি বানাতেই হবে। এটা খেলেই ভাই-এর মন খুশ হয়ে যাবে। কীভাবে তৈরি করতে হবে এই অভিনব খাদ্যবস্তুটি সেটাই এখন দেখার।

কী কী লাগবে

মুরগির মাংসের কিমা-২৫০ গ্রাম

ময়দা-২৫০ গ্রাম

ডিম- ৩টে

পেঁয়াজ- বড় ২টো

কাঁচালঙ্কা-৩টে

ধনেপাতা-১ বড় আঁটি

লেবু-১ টা

রসুন-১ টা

আদা-২ টেবিল চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো-সামান্য

হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ

ধনে গুঁড়ো-২ চা চামচ

গরমমশলা গুঁড়ো-১ চা চামচ

নুন-স্বাদমতো

রিফাইন তেল-ভাজবার জন্য

কীভাবে রাঁধবেন

আদা, রসুন ও পেঁয়াজ কুচি করে রাখতে হবে। মুরগির মাংসের কিমা ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। কড়াইতে আন্দাজমতো তেল দিয়ে রসুন কুচি ও আদাকুচি দিয়ে একটু ভেজেই কিমা দিয়ে নাড়তে হবে। গ্যাসের আঁচ মাঝারি রাখতে হবে। কিমা বেশ ভাজা হলে লঙ্কাগুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো,  ধনেগুঁড়ো ও কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঢাকা খুলে ধনেপাতা কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে  মিশিয়ে গ্যাস কমিয়ে মিনিট পাঁচেক রাখতে হবে। পাঁচ মিনিট পরে ঢাকা তুলে প্রথমে লেবুর রস ও পরে গরমমশলাগুঁড়ো দিলেই তৈরি হয়ে যাবে প্যান্থারাসের পুর। এবার পুরটা যতক্ষণ ঠান্ডা হচ্ছে ততক্ষণ প্যান্থারাসের খোল তৈরি করার জন্য ময়দা নিতে হবে। ময়দায় নুন দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ডিম আর অল্প অল্প করে জল দিয়ে পাতলা গোলা তৈরি করতে হবে। এবার তাওয়া গরম করে হাতায় করে গোলা দিয়ে প্যানকেক তৈরি করার মতো করে মিনিট দুয়েক রেখেই তুলে নিতে হবে। বেশিক্ষণ রাখলে শক্ত হয়ে যাবে। এভাবে যতগুলো প্যান্থারাস বানানো হবে ততগুলো খোল তৈরি করে নিতে হবে। এই খোলগুলো কিছুটা ঠান্ডা হলে একটা করে নিয়ে তাতে পুর ভরে প্যান্থারাসের আকার দিতে হবে।খোলে পুর দিয়ে খোলের ওপরের ও নীচের অংশ দুটো ভাঁজ করে রোলের মতো গোল করে নিতে হবে। এভাবে সব কটা প্যান্থারাস বানিয়ে মিনিট দশেক রেখে গরম তেলে ভেজে নিলেই তৈরি হবে ফাটাফাটি প্যান্থারাস। খেলেই ভাইয়ের খোশমেজাজ!

moumita-malla20180603122811462

গোটা মশলার পাঁঠার ঝোল

 

কী কী লাগবে

পাঁঠার মাংস-৮০০গ্রাম

আলু-২০০গ্রাম

পেঁয়াজ-বড় ৪ টে

গোটা রসুন-৯-১০টা

আদা-৩০গ্রাম

গোটা জিরে-১ চা চামচ

গোটা ধনে-২ চা চামচ

গোটা গোলমরিচ- ১২ টা

শুকনো লঙ্কা-৫-৬ টা

গোটা হলুদ-আন্দাজমতো

সর্ষের তেল-আন্দাজমতো

গোটা গরমমশলা-ছোট এলাচ(৪), দারচিনি-৪ট, লবঙ্গ- ৪টে

তেজপাতা- ২টো

টক দই- ৫০ গ্রাম

চিনি-২ চা চামচ

নুন- আন্দাজমতো

 

কীভাবে রাঁধবেন

গ্যাসে তাওয়া বসিয়ে গোটা জিরে, গোটা ধনে, শুকনো লঙ্কা আর গোলমরিচ ভালো ভাবে সেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। তারপর শিলে অথবা মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিতে হবে। রসুনের ওপরের খোসা ছাড়িয়ে, নীচের শুঁয়োগুলো একটু ছেঁটে ধুয়ে রাখতে হবে। আলু বড় হলে চার টুকরো না হলে আধখানা করে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। মাংস রান্নার আগে মাঝারি মাপের এক ডেকচি জল গরম করে রাখতে হবে। আদা বেটে নিতে হবে। হলুদ  ও শুকনো লঙ্কা বেটে নিতে হবে।২ টো রসুন বেটে রাখতে হবে।মাংস ভালো করে ধুয়ে নিয়ে টক দই, আদাবাটা, হলুদ বাটা, শুকনো লঙ্কাবাটা ও রসুনবাটা দিয়ে ভালো করে মেখে অন্তত এক ঘন্টা ঢেকে রাখতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে সর্ষের তেল গরম করে আলুগুলো ভেজে রাখতে হবে। তেল কমে এলে আবার তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, ছোট এলাচ (২ টো), দারচিনি (২টো), লবঙ্গ ( ২টো) ও তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজতে হবে।এরপর একটু চিনি  দিয়ে নাড়াচাড়া করে মশলা মাখা মাংস ও নুন দিয়ে খুব ভালোভাবে কষতে হবে। অল্প অল্প গরম জল দিতে হবে আর খুন্তি দিয়ে কড়াইয়ের নীচ থেকে মাংস উল্টেপাল্টে দিতে হবে। মশলা থেকে তেল ছেড়ে গেলে প্রেশার কুকারে একটু ঘি দিয়ে কষানো মাংস ঢেলে দিতে হবে।ভাজা মশলার গুঁড়ো দিয়ে বেশ করে নাড়াচাড়া করে কিছুটা জল দিয়ে ঢাকা বন্ধ করতে হবে। ৩টে সিটি পড়লে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। প্রেশার কুকার কিছুটা ঠান্ডা হলে ঢাকা খুলে গোটা রসুন, ভেজে রাখা আলু আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে যদি জল দেবার প্রয়োজন হয় তবে জল দিয়ে আবার প্রয়োজনমতো সিটি দেওয়াতে হবে। এই রান্নায় বেশ ঝোল থাকবে। গ্যাস বন্ধ করে প্রেশার কুকার ঠান্ডা করতে হবে। ঢাকা খুলে ঘি আর বাকি গরমমশলাবাটা দিয়ে একটু নেড়ে ঢেকে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে গোটা মশলার পাঁঠার ঝোল। গন্ধেই ভাইয়ের মন উচাটন হবে।

 

হাঁড়ি বন্ধ পাঁঠার দম

FotoJet - 2022-10-26T161212.968

 

কী কী লাগবে

পাঁঠার মাংস- ৫০০গ্রাম

আলু-২০০ গ্রাম

পেঁয়াজ-২৫০ গ্রাম

রসুন-২টো

আদা- ২৫ গ্রাম

গোটা গোলমরিচ-১০টা

তেজপাতা-২ টো

গোটা গরমমশলা- ছোট এলাচ (২টো), দারচিনি(২ টো),লবঙ্গ( ২ টো)

ঘি-১০০গ্রাম( এই রান্নাটা সর্ষের তেলেও করা যায়)

কাঁচালঙ্কা- ৩-৪ টে

টক দই- ১০০ গ্রাম

চিনি- স্বাদ অনুযায়ী

নুন- স্বাদমতো

কীভাবে রাঁধবেন

মাংস পরিষ্কার করে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। আলুও ভালো করে ধুয়ে মোটা মোটা করে চাকার আকারে কেটে নিতে হবে। পেঁয়াজ সরু সরু করে কুচিয়ে রাখতে হবে। শুকনো লঙ্কার বীজ, বোঁটা ফেলে কুচি করে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। রসুন ছাড়িয়ে ধুয়ে বেটে নিতে হবে। আদাও বেটে রাখতে হবে। মাংসে দই, পেঁয়াজ কুচি, রসুনবাটা, আদাবাটা, শুকনো লঙ্কা কুচি এবং ঘি বা সর্ষের তেল সব ভালোভাবে মেখে এক ঘন্টা রাখতে হবে। এরপর তলা ভারী ডেকচিতে বা হাঁড়িতে এই মাংস দিয়ে ওপরে মোটা করে কাটা আলু আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে হাঁড়ি বা ডেকচির মুখ আটার লেচি দিয়ে আটকে গ্যাসে বসাতে হবে। এই রান্নার সময় আঁচ থাকবে কমানো। রান্না হতে সময় লাগবে। জল বিশেষ লাগবে না। যদি মনে হয় তলায় লেগে যাচ্ছে তবে কিছুটা গরম জল দিয়ে হাঁড়ি বা ডেকচির মুখ আবার বন্ধ করতে হবে। সম্ভব হলে ঢাকার ওপরে কাঠকয়লার আঁচ দেওয়া যেতে পারে। মাংস সেদ্ধ হলে ঢাকা খুলে গরমমশলাগুঁড়ো ও ঘি দিলেই তৈরি হয়ে যাবে হা্ঁড়ি বন্ধ পাঁঠার দম। চেনা মাংস নতুন হয়ে উঠবে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...