ভাদু দেবী নাকি মাটির কন্যা

লাল মাটির রাঢ় ভূম। শ্রাবণের মেঘ ফুরিয়ে গেলেই মেতে ওঠে রাজকুমারীর আগমনীর সুরে। কল্পনা আর বাস্তবের কুয়াশায় হারিয়ে যাওয়া রাজকন্যা ভদ্রাবতী।
ইতিহাস, পুরান বা কল্পনা রাজকুমারী ভদ্রাবতীর বাস যেখানেই হোক না কেন শ্রাবণ শেষ হলেই মানুষ মেতে ওঠে ভাদু উৎসবে।
ভদ্রাবতীর সংক্ষিপ্ত নাম ভাদু। তিনি পুরুলিয়ার রাজা নীলমণি সিংহদেওয়ের কন্যা। রাজকুমারী ভদ্রাবতী কে নিয়ে একাধিক কাহিনী শোনা যায়।
একটি কাহিনি বলে, রাজকুমারী ভদ্রাবতী অন্ত্যজ শ্রেণীর এক পুরুষের প্রেমে পড়েন। কিন্তু সেই প্রেমিককে মানতে পারেনি ভদ্রাবতীর পিতা। তাই ভদ্রাবতী আত্মহত্যা করেন। মৃত মেয়ের স্মৃতিতে রাজা শুরু করেন ভাদু উৎসব।
ধর্মীয় মতে ভাদ্র মাসে যে রমণী লক্ষ্মীপুজো করেন তাঁর উপরে যশোলক্ষ্মী, ভাগ্যলক্ষ্মী, কুললক্ষ্মী প্রসন্ন হন। সেই অনুযায়ী মনে করা হয়, ভাদু আসলে শস্যদেবী।
ভাদু উৎসব পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাঁচি ও হাজারিবাগ জেলার লৌকিক উৎসব।
ভাদ্র মাসের প্রথম দিনটিতে কুমারী মেয়েরা গ্রামের ভাদু প্রতিষ্ঠা করেন। একটি পাত্রে ফুল রেখে ভাদুর বিমূর্ত রূপ ভেবে নিয়ে ভাদু লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে আরাধনা হন গাওয়া হয়। যা ভাদু গান হিসেবে জনপ্রিয়।
এখন অবশ্য ভাদু দেবীর মূর্তি পাওয়া যায়। ভাদ্র সংক্রান্তির সাত দিন আগে ভাদুর মূর্তি ঘরে নিয়ে আসা হয়। ভাদ্র সংক্রান্তির পূর্ব রাত্রকে ভাদুর জাগরণ পালিত হয়ে থাকে।
রাত নয়টা বা দশটা থেকে ভাদু গীত গাওয়া হয়। রাত পোহালে ভাদ্র সংক্রান্তির ভোরে দলবদ্ধভাবে মহিলারা ভাদু মূর্তির বিসর্জন করা হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...