কোথাও আকর্ষণীয় মডেলের মুখ কিংবা কোথাও নামী গায়কের অনুষ্ঠানের খবর। এই সব খবরের পাশে দেওয়া থাকে একটা কিউআর কোড। সেই কোড স্ক্যান করলেই মিলবে সেই খবরের সমস্ত তথ্য।
সদ্য বাজারে আসা গাড়ি মোবাইলে চাক্ষুষ করার বার্তা দেওয়া বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং-ও প্রচুর। তাতেও সঙ্গে কিউআর কোড। স্ক্যান করলেই নাকি মোবাইলেই দেখে নেওয়া যাবে নতুন গাড়িটির সমস্ত তথ্য!
কিন্তু সেই কোড স্ক্যান করার আগে সাবধান! এই স্ক্যান কোডও হতে পারে প্রতারণার ফাঁদ। পথে যেতে যেতে এমন হোর্ডিং-বিজ্ঞাপন দেখে মোবাইল নিয়ে কোড স্ক্যান করেন। আর করলেই বিপদ! নিমেষের মধ্যে উধাও হয়ে যেতে পারে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সব টাকা। নয়তো রাতারাতি ফাঁস হয়ে যেতে পারে আপনার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য। মোবাইল ফোনের দখল নিতে পারে সাইবার প্রতারকেরা। হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন! এমন ভয়ংকর বিপদ এসেছে শহরে।
এইরকম হোর্ডিং-বিজ্ঞাপন নিয়েও চিন্তিত কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে যে গত দু’মাস ধরে এমন বিষয়ে বহু অভিযোগ আসছে তাঁদের কাছে। তবে, জানা গিয়েছে যে রাজ্যের অন্যান্য পুলিশ কমিশনারেটের মধ্যে এই ধরণের বিজ্ঞাপনী-হোর্ডিং নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে বেশি ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে।
আর এরপরেই রয়েছে কলকাতার বিধাননগর। এই বিষয়েঅভিযোগকারীরা জানিয়েছেন যে তাঁরা পথে যেতে যেতে রাস্তার ধারে লাগানো বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং দেখে মোবাইলে কিউআর কোড স্ক্যান করেছিলেন। আর ব্যাস তারপরেই বিপদের মুখে পড়ে যায় তাঁরা। কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আড়াই লক্ষ টাকা, আবার কারও খোয়া গিয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকারও বেশি।
এখানেই শেষ নয়, এমনও অভিযোগকারী রয়েছেন, যাঁর অজান্তেই ঋণ চালু হয়ে গিয়েছে। সেই বিষয়ে তদন্তে জানা গিয়েছে যে ওই ব্যক্তি একটি বাড়ির বিজ্ঞাপন দেখে কিউআর কোড স্ক্যান করেছিলেন। তাতেই সেই বাড়ি কেনার জন্য নাকি তাঁর নামে ঋণের কাগজ জমা পড়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে, বাগুইআটির বাসিন্দা কলেজপড়ুয়া এক অভিযোগকারিণী এই বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েছেন যে বাইপাসের ধারের একটি প্রসাধনী সামগ্রীর বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং দেখে কিউআর কোডটি স্ক্যান করেছিলেন তিনি। এরপরেই তাঁর ফোনটি অকেজো হয়ে যায়।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে তারপর আর কিছুই করা যাচ্ছিল না। তাঁর মনে হচ্ছিল অন্য জায়গা থেকে তাঁর ফোনটা কেউ পরিচালনা করছে। আর তারপরেই তাঁর দুটি সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট দু’টি হ্যাক হয়ে যায়।
ডায়মন্ড হারবার রোডের এক বাসিন্দা এই একই বিষয়ে অভিযোগ করেন। তিনি জানান হঠাৎ তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ দফায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা কেটে যায়। কিছুই না বুঝতে পেরে পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন। এরপর দিন কয়েক বাদে থানা থেকে ডেকে জানতে চাওয়া হয়, কোনও কিউআর কোড স্ক্যান করেছিলেন নাকি। তিনি জানান বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে আসার সময়ে একটি আসবাবপত্রের বিজ্ঞাপন দেখে স্ক্যান করেছিলেন। তারপরেই পুলিশ জানায় যে সেটা থেকেই হয়েছে।
এই প্রতারণা যাতে শহরে বেড়ে না যায়। তার জন্য কলকাতা পুলিশ এই প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক করতে প্রচারে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা জানিয়েছেন যে এই প্রতারণার কথা বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে ডেকে কথা বলা হচ্ছে। বড় বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলির তালিকা তৈরি হচ্ছে। গত কয়েক মাসে কোন কোন সংস্থা তাদের সঙ্গে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছে, তা দেখা হবে। প্রতারণার এই ধরন একেবারে অভিনব।
এছাড়া সাইবার গবেষক বিতনু দত্ত জানিয়েছেন যে এই কিউআর কোড স্ক্যান করা মানেই সব কিছু বেহাত হয়ে গেল বা প্রতারিত হয়ে যাবে, তেমনটা কিন্তু নয়। এই সমস্ত প্রতারকেরা কিউআর কোডের মধ্যে একটি লিঙ্ক দিয়ে রাখে। কিউআর কোড স্ক্যান করে যদি মনে হয় যে কোনও সন্দেহজনক লিঙ্ক খুলেছে, তা হলে আর এগোনো উচিত নয়। অর্থাৎ এক কথায় বললে যেকোনও কোড স্ক্যান করার আগে নিজেকে সতর্ক হতে হবে।