পর্তুগিজ-ব্রিটিশ ঐতিহ্যের হুগলি নতুন করে টানছে পর্যটকদের

হোগলা থেকে হুগলির নামকরণ। যদিও এই তথ্যের সঠিক প্রমাণ নেই। আবুল ফজলের লেখা 'আইন-ই-আকবরী' গ্ৰন্থেও হুগলির নাম রয়েছে। পর্তুগিজ ও ব্রিটিশ ঐতিহ্য আজও লক্ষ্য করা যায় হুগলি শহরের আনাচে কানাচে। আজও বহু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এই শহর। বহু জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র রয়েছে এই জেলায়।

এই নিবন্ধে হুগলি জেলার ভ্রমণ যোগ্য পাঁচটি স্থানের নাম দেওয়া হল।

bandel church

ব্যান্ডেল চার্চ: পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম খ্রিস্টান চার্চগুলির মধ্যে অন্যতম হল ব্যান্ডেল চার্চ। তবে চার্চটির আরও একটি নাম রয়েছে যেটা হল দ্য ব্যাসিলিকা অফ দ্য হোলি-রোসারি। ক্যাপ্টেন পেদ্রো তাভারেস ক্যাথলিক ধর্মপ্রচার ও গির্জা নির্মাণের জন্য সম্রাটের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। তারপর ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্যান্ডেল চার্চ নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও তারপর ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুরের আক্রমণে প্রথম গির্জাটি ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে গোমেজ দে সোতো আবার নতুন করে নির্মাণ করেন। প্রথমে কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হলেও পরে ইট ও কংক্রিট দিয়ে গির্জাটি নির্মিত হয়েছিল। পর্তুগিজদের তৈরি এই অপূর্ব গির্জাটি দেখতে বহু পর্যটক আসেন হুগলি জেলায় ব্যান্ডেলে। এখানে অবস্থিত এই ব্যান্ডেল চার্চ। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৬ পর্যন্ত খোলা থাকে দরজা।

FotoJet - 2022-07-18T112901.223

হুগলি ইমামবাড়া: গণিতজ্ঞ সৈয়দ কেরামত আলি ইমামবাড়ার নকশা তৈরি করেছিলেন। নির্মাণকার্য চলেছিল ২০ বছর ধরে। খরচ হয়েছিল প্রায় ৩ লক্ষ টাকা।   পশ্চিমবঙ্গে ইসলামিক স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন হল ইমামবাড়া। এখানে রয়েছে একটি বিশাল ঘড়ি। যেটি ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে সৈয়দ কেরামত আলী লন্ডন থেকে নিয়ে এসেছিলেন। যার মূল্য ছিল ১১,৭২১ টাকা। আজও ইমামবাড়ার প্রবেশদ্বারের উপরে রয়েছে ঘড়িটা। ইমামবাড়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এই ঘড়ি। বছরে বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন সময় পর্যন্ত দর্শকদের জন্যে প্রবেশদ্বার খোলা রাখা হয়। এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট মাসে সকাল ৮টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আর সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাসে ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দর্শকরা প্রবেশ করতে পারবে এখানে।

FotoJet - 2022-07-18T112041.805

সবুজ দ্বীপ: হুগলি ও বেহুলা নদীর সংযোগ স্থলেই অবস্থান সবুজ দ্বীপের। ঝাউ, পাম, ইউক্যালিপটাস, অর্জুন, শাল, সেগুন, মেহগনি, সুপারি, নারকেল ও দেবদারুর গাছে ঘেরা এই দ্বীপে রয়েছে বহু দর্শনীয় স্থান। যার মধ্যে নাম রয়েছে পঞ্চরত্ন মন্দিরে শ্রী শ্রী মহাবিদ্যা, সুখাড়িয়ার প্রাসাদ, ১৮১০ সালে তৈরি নাগারা শৈলীর টেরাকোটার কাজে ২৫ চূড়াবিশিষ্ট বারোচালার আনন্দময়ী মন্দির ইত্যাদির। পিকনিক স্পট হিসেবে পর্যটকদের কাছে খুব বিখ্যাত এই দ্বীপ।

FotoJet - 2022-07-18T112339.053

তারকেশ্বর মন্দির: ১৭২৯ সালে নির্মিত তারকেশ্বর মন্দিরটি হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র স্থান। রাজা বিষ্ণুদাসের ভাই ভারমল্লা এই মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। কথিত আছে, ভক্ত বিষ্ণুদাসের স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন মহাদেব। যে তারকেশ্বরের কাছের জঙ্গলে একটি শিলাখন্ড পড়ে রয়েছে যা তুলে এনে একটি মন্দির নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ আসেন এই মন্দিরে। করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন সকালে ৫টা থেকে দুপুর ২টো ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকত তারকেশ্বর মন্দির।

FotoJet - 2022-07-18T112557.989

পান্ডুয়া মসজিদ ও মিনার: মসজিদ ও মিনারটি অবস্থিত হুগলির পান্ডুয়া নামক স্থানে। পান্ডুয়া রাজাদের নাম থেকেই অঞ্চলটির নাম পান্ডুয়া দেওয়া হয়েছে। এখানে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরেই বহু সৌধ নির্মাণ করা হয়েছিল সেখানে। তবে পান্ডুয়া মিনার কত সালে নির্মাণ করা হয়েছিল তার সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বহু ঐতিহাসিকদের ধারণা হিন্দু রাজাদের পরাজিত করার পর মুসলিম শাসকরা এই মিনারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মিনারের পশ্চিমে রয়েছে বাড়ী মসজিদ। মসজিদে উপর বাংলার পোড়া মাটির টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায়। বহু পর্যটক এই মসজিদটি দেখতে এখানে আসেন। পর্যটকদের জন্যে সারা বছর খোলা থাকে এই মিনার ও মসজিদ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...