" মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে/ আমরা বাঙালি বাস করি সেই তীর্থে বরদবঙ্গে"। বাঙালির অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার রন্ধনশৈলী। দেশজ উপাদানে দেশি রান্না বাঙালি পাকশালার নিজস্ব সম্পদ।সেই সব রান্নার এক ঝলক ধরা রইল এই লেখায়।
করলার তিতঝুরি
কী কী লাগবে
একটু পাকা করলা-৫০০ গ্রাম
মটরের ডাল-২৫০ গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো-২ চা-চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো - আন্দাজমতো
শুকনো লঙ্কা-ফোড়নের জন্য
মেথি-ফোড়নের জন্য
সর্ষে-ফোড়নের জন্য
তেজপাতা-ফোড়নের জন্য
কাঁচা লঙ্কা-২-৩ টে
আদা-২০ গ্রাম
সর্ষের তেল-রাঁধবার জন্য
ঘি-২ চা-চামচ
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
কীভাবে রাঁধতে হবে
করলার তিতঝুরি রান্নার আগের রাতে মটরের ডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। রান্নার আগে মটরের ডাল বেটে নিতে হবে।ডাল বাটাটা হাত দিয়ে খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে।এই রান্নাটিতে একটু পেকে যাওয়া করলা ব্যবহার করা হয়।তবে কচি করলায় হবে না এমন নয়। করলাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে অন্তত পনেরো মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।তারপর সরু সরু করে কেটে নিতে হবে। আদা খোসা ছাড়িয়ে বেটে রাখতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে মটরের ডাল বাটা থেকে হাতের তেলোর মাপের বড় বড় চাপর( বড় বড়ার মতো) ভেজে নিতে হবে। বেশ কড়া করে ভাজতে হবে। কড়াই পরিষ্কার করে নিয়ে তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, মেথি, সর্ষে, তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে কেটে রাখা করলা একটু ভেজে গ্যাস কমিয়ে ঢেকে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঢাকা তুলে গ্যাস বাড়িয়ে বেশ ভেজে নিতে হবে। এরপর হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, ১ টা কাঁচা লঙ্কা চিরে দিয়ে অল্প জল দিয়ে করলা সেদ্ধ করে নিতে হবে।চাপর ভেঙে টুকরো করে মশলা মাখা করলায় দিয়ে নুন, আদাবাটা আর কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে ঘি দিয়ে নামিয়ে রেখে ঢেকে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে করলার তিতঝুরি। পরিবেশনের সময় চাই গরম গরম ভাত। তবে প্রথম পদেই হবে বাজিমাত।
মোচা ছেঁচকি
কী কী লাগবে
মোচা-১টা( বড়)
নারকেল-১টা(মাঝারি)
হলুদ গুঁড়ো-১ চা-চামচ
জিরে গুঁড়ো-১ চা- চামচ
জিরে-ফোড়নের জন্য
শুকনো লঙ্কা-ফোড়নের জন্য
কাঁচা লঙ্কা-৩-৪ টে
সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য
চিনি- স্বাদ অনুযায়ী
নুন- আন্দাজমতো
ঘি-১ চামচ
কীভাবে রাঁধতে হবে
নারকেল কুরিয়ে নিতে হবে। মোচা ছাড়িয়ে খুব সরু সরু করে কেটে নিয়ে নুন- হলুদের জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।জল থেকে তুলে চিপে জল ঝরিয়ে প্রেশার কুকারে দিয়ে জল দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা, জিরে ফোড়ন দিয়ে সেদ্ধ করা মোচা, নুন, হলুদ গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে। একটুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রেখে নারকেল কোরা আর চিনি দিয়ে মিশিয়ে জল শুকিয়ে ঝরঝরে করতে হবে।এরপর ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এই পদটি গরম ভাতে বেশি জমলেও রুটি, পরোটার সঙ্গেও ভালো লাগে।
পালংশাক দিয়ে রুই মাছের ঝোল
কী কী লাগবে
বড় রুই মাছ-১ কেজি
পালংশাক-১ কেজি
হলুদ গুঁড়ো-৪ চা চামচ
জিরে গুঁড়ো-১ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো-২চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো- আন্দাজমতো
আদা-২৫ গ্রাম
তেজপাতা- ফোড়নের জন্য
পাঁচফোড়ন- ফোড়নের জন্য
শুকনো লঙ্কা- ফোড়নের জন্য
সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য
নুন- স্বাদ অনুযায়ী
কীভাবে রাঁধতে হবে
মাছ পরিষ্কার করে নিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। পালংশাকের নরম ডগা আর পাতাগুলো ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে একটু মোটা করে কেটে নিতে হবে। কিছুটা আদা কুচিয়ে রাখতে হবে। বাকি আদাটা বেটে নিতে হবে। কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে নুন-হলুদ মাখানো মাছ নরম করে ভেজে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে আর একটু তেল দিয়ে শুকনো লঙ্কা, পাঁচফোড়ন আর তেজপাতা ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বের হলে আদা কুচি দিয়ে একটু ভেজে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো ও ধনে গুঁড়ো দিয়ে নেড়েচেড়ে জল দিয়ে ফোটাতে হবে। ফুটে গেলে ভাজা মাছগুলো, কাঁচালঙ্কা, শাকের ডগা ও পাতা, নুন আর আদাবাটা দিয়ে ফোটাতে হবে। দরকার মনে হলে অল্প জল দিতে হবে। শাকের ডগা সেদ্ধ হয়ে বেশ মাখা মাখা হলে সর্ষের তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এই রান্না কিন্তু গরম ভাত ছাড়া জমবেই না।