বাগু নদীর দুই পারের পতিত জমিতে দেশীয় গাছের বনাঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু করল প্রশাসন। বছর দুই আগে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য পর্ষদের তত্ত্বাবধানে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল। এবার সেই প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে তৎপর প্রশাসন। ১২৫টি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর প্রায় দেড় হাজার মহিলার হাতে আম, জাম, কাঠাল, তাল, তেঁতুল, নিম, চন্দন, মেহগিনির মতো বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির গাছের চারা তুলে দেওয়া হয়েছে। চারাগুলি লাগানোর জন্য প্রতিটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর জন্য ৮০ মিটার লম্বা ও ১০০ মিটার চওড়া জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলিকে পাট্টা প্রদান করা হয়েছে। পাট্টা পাওয়া জমিগুলিতে মহিলারা দেশীয় গাছ লাগানোর পাশাপাশি সব্জি চাষও করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিডিও সুভাষ ঘোষ। বাগুই নদীর দু’পারে ৫ কিলোমিটার করে ১০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে প্রায় ২০০ হেক্টর এলাকায় এই দেশীয় গাছের স্থায়ী বনাঞ্চলের পাশাপাশি সব্জি চাষ গড়ে তুলতে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্যে জিও ট্যাগ তৈরী করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এনআরইজি প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটিরও বেশী টাকা ব্যয় করে রাজ্যে এই প্রথম এই ধরণের স্থায়ী বনাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। পটাশপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সুভাষ ঘোষের মন্তব্য, এতে একদিকে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকে মেয়েরা অনেকটাই সহায়তা পাবেন। এই ধরণের প্রকল্প যত বেশী হবে তত ভালো। পরিবেশ ও তার ভারসাম্য রক্ষা করাটাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। পারের বাইরের দিকের অংশে সব্জি চাষের ক্ষেত্রে কোনোরকম রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। নিজ নিজ উৎপাদিত সব্জি মহিলারা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বায়োডাইভার্সিটির চেয়ারম্যান সোমনাথ দাস অধিকারী জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত, সেচ দপ্তর, পরিবেশ দপ্তর, ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের সহযোগীতায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা গেছে। এতে অনেকগুলি দিক খুলে যাবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশীয় গাছেদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্যদিকে স্বাভাবিক বনাঞ্চল গড়ে তুলে বন্য জীবজন্তুদের আশ্রয়স্থল নির্মাণের মধ্যে দিয়ে তাদের অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। এবং মহিলারাও এতে স্বনির্ভর হবেন।
আরও জানা যাচ্ছে, ইউক্যালিপটাস, আকাশমণির মতো গাছ একটাও লাগানো হবে না এই প্রকল্পে। গত বছর তিন হাজার তালগাছের চারা সহ পাঁচ হাজার গাছের চারা লাগানো হয়েছিল। এ বছর তিন হাজার তাল ও অন্যান্য পাঁচ হাজার গাছের চারা লাগানোর প্রক্রিয়া চলছে। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে তাদের দেখাশোনা, সমস্তই সম্পাদনা করবে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা।