“সমুদ্রে যেমন ঢেউ আসে, তবু সাঁতার কাটতে হয়, তেমনি জীবনেও। বাধা থাকলেও স্বপ্নগুলোর জন্য ঝাঁপ দিতে হয়। তাই, তোমার যদি সন্তান বা সংসারের কোনও কাজে আটকে পড়তেও হয়, স্বপ্নগুলো যেন বেঁচে থাকে। সেগুলো নিয়ে যেন এগিয়ে যেতে পারো।”
মা এমনটাই বলতেন ছোট্ট সুধাকে। চেন্নাইতে সে স্বপ্ন বুনতেই বুনতেই বড়ো হয়েছিলেন তিনি। সে ভাবেই একদিন মহাবালিপুরমে পারিবারিক ভ্রমণের সময় জিপসিদের দেখতে পান। জিপসিদের নানা দেশ ঘুরে বেড়াতে দেখেন তিনি।
তাঁর কথায়, “তাঁদের দেখার পর থেকেই দুনিয়াটা ঘুরতে শুরু করে। কত দেশ দেখার অভিজ্ঞতা তাঁদের। কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা। আমার মনে হল, আমিও সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ নেব।” সে পথেই আজ তাঁর ৬টি পাসপোর্ট। ৬৫টা দেশ ঘোরা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
কীভাবে এই ভ্রমণের শুরু? জানালেন, পেশায় সাংবাদিক ছিলেন তিনি। সেই সুবাদেই নানা দেশ ভ্রমণ করতে হত তাঁকে। সে ভাবেই এই স্বপ্নের সূচনা। বিলাসবহুল ছিল এই সব ভ্রমণ। হোটেল থেকে গাড়ি সবকিছুতেই ছিল বিলাসের ছাপ।
মধ্য বয়স পর্যন্ত চার দেওয়ালেই আটকে ছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর থেকেই জীবন বদলাতে শুরু করে। সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়ার পর প্রতিরক্ষা বিভাগের এনালিস্ট হিসেবে জয়েন করেন তিনি। এর পর থেকেই তাঁর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শুরু হয়। দূরে দূরে ভ্রমণের সাথে সাথে খুলে যায় একের পর এক রাস্তা। ইয়ুথ হোস্টেলে থাকা, কত রকম লোকের সাথে মোলাকাত, সব মিলে একটা নতুন দিগন্ত খুলে যায় তাঁর। সে সব কথাই তিনি লিখতে শুরু করেন একটি বইতে।
১৯৯৬ সালে কৈলাসে ভ্রমণ করেন তিনি। সেই যাত্রা ছিল ৩২ দিনের। কীভাবে তাঁর ছোটছেলেকে শাড়িতে জড়িয়ে তাঁর যাত্রা শুরু, সে কথা বলছিলেন তিনি। “আমাকে এই যাত্রা একটা ব্যাপক কনফিডেন্স দেয়। বলে, আমি একলাই অনেক কিছু করতে পারি।” জাপানের সমুদ্রের নীচে তলিয়ে যাওয়া বা কাশ্মীরের শীতার্ত উপত্যকা, সবকিছুতেই অবিচল ছিলেন তিনি। সমস্ত অভিজ্ঞতাই লিখতেন তিনি। তা থেকেও আয় হত কিছু। পাশাপাশি, সারা দুনিয়াতেই বেড়ে চলছিল তাঁর বন্ধুর সংখ্যা।
নানা ভাবেই ‘বেঁচে থাকা’র সঙ্গে মোলাকাত হচ্ছিল তাঁর। কোনও বন্ধু পাশে থাকছিলেন, তো কোনও বন্ধু ছেড়ে যাচ্ছিলেন। সন্তান ও স্বামীর সাহায্য তাঁকে আরও এগিয়ে দিচ্ছিল। সামনের সেপ্টেম্বরে মাদাগাস্কর ও ডিসেম্বরে পাতাগোনিয়াতে যাচ্ছেন তিনি।
পরিশেষে জানালেন, “যদি আপনার স্বপ্ন বড়ো হয় আর যদি আপনি তা পূরণ করতে বদ্ধপরিকর হন, তবে কেউ আপনাকে আটকে রাখতে পারবে না। আজ আমার মায়ের কথা বড়ো মনে পড়ছে।"