এ বার থেকে অনলাইনেও পাওয়া যাবে বাংলার স্বনির্মিত শালপাতার থালা। প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতেই মূলত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্লাস্টিক ও থার্মোকলের বিকল্প হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে পৌঁছে যাবে শালপাতার থালা।
সম্প্রতি পশ্চিম মেদেনীপুর সফরে এসে বনজ সম্পদ শালপাতা থেকে উৎপাদিত সামগ্রী বিপণনের জন্য ‘শাল্বী’র ট্রেডমার্কের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিষ্ঠানটির নামকরণও তাঁরই করা। মনে করা হচ্ছে সরকারি এই পদক্ষেপের ফলে আর্থিক দিক থেকে আরও বেশী স্বনির্ভর হয়ে উঠবেন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা।
ঝাড়গ্রামের তৈরী শালপাতা আন্তর্জাতিক বাজারজাত করার জন্য অনলাইন ট্রেডিংয়ের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আসছে ট্রেডমার্ক। দেশের বড় বড় শহর ও বিদেশের বাজারগুলিতে যাতে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে এই পাতা ব্যবহার করা যায়, সেই কথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রেডমার্ক হওয়ায় সহজেই বারকোডিং করা যাবে এবার থেকে।
চলতি বছরের ৬ই মার্চ প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঝাড়্গ্রামের বাঁদরভুলা মৌজায় ২১ হাজার ৭৫০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে তিনতলা শাল ও সাবাই প্রশিক্ষণ ও উৎকর্ষ কেন্দ্র প্রদর্শনশালার উদ্বোধন করেন মমতা। শালপাতার গবেষণা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, সামগ্রী তৈরী ও বিক্রির সমস্ত ব্যবস্থা এখানে করা হয়েছে।
ঝাড়্গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রাণী এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে মন্তব্য করেছেন, শালপাতা দিয়ে তৈরী জিনিসের জন্যেই মুখ্যমন্ত্রী এর ‘শাল্বী’ নামকরণ করেছেন। ইতিমধ্যে আমরা এর ট্রেডমার্ক ও লোগো পেয়েছি। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধবের ভূমিকায় কাজ করবে এই শালপাতা, খুব শীঘ্রই যাকে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে পৌঁছে দিতে পারব।
কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলাতে সাড়ে ৬ লক্ষ এবং সারা রাজ্যে প্রায় ৩২ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শালপাতার ব্যবসার সাথে জড়িত। অত্যাধিক পরিমাণে থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে শালপাতার সামগ্রী নির্মাণের সাথে জড়িত মানুষজনের রুটি-রুজি সংশয়ের মুখে পড়েছিল। নতুন প্রকল্পের ঘোষণায় খানিকটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন ঝাড়্গ্রামের মানুষেরা। প্রতি হাজার শালপাতার থালার দাম ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
খড়গপুরের আইআইটি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের খাদি দপ্তর শালপাতার হস্তশিল্প সামগ্রী এবং বুফেতে খাওয়ার জন্য শালপাতার থালাকে শক্তপোক্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ঝাড়্গ্রাম জেলায় প্রায় ৮ হাজার স্বসহায়ক দল আছে যারা শালপাতা নিয়ে কাজ করেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে জীবন, এমনটাই মনে করছেন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা।