ফাঁকা নাকি? আছো তুমি ফাঁকা নাকি?
না না, ক্লাসরুম ডাকাডাকি করছে না। ডাকাডাকি করছে রাস্তাঘাট। পুজোর চারদিন কি এমন ফাঁকা-একাই কাটবে নাকি?
দূর কী যে বলেন, কোন বেরসিক তেমনটা চায়! বছরের ৩৬০ দিন এমন একলা একলা তাও কাটানো যায় থাকগে-যাগগে বলে। কিন্তু পুজোর চারদিন! মোটেই না। তাই পুজোয় চাই নতুন প্রেম। এ বায়না আজকের নয়, বলুন চির পুরাতন। মা দুর্গা ঘরে এলে আরও বেশি রোমান্টিক হয়ে ওঠে বাঙালি। দুর্গা মায়ের বোধনে হৃদয়ে প্রেমেরও বোধন হয়
তখনও বাঙালির জীবনে স্মার্ট ফোন, টিন্ডার, ডেটিং অ্যাপ আসেনি। ফ্রি মিক্সিং দুরস্ত।সেই তখন থেকে চলেই আসছে। আরও আগে যদি ফিরতে পারেন ফিরে যান সেই চিক-ঝরোখার আমলে। পুরুষের সামে আসা মানা। চিকের আড়াল থেকে যতটুকু দেখে নেওয়া যায় ততটুকুই প্রেমের সৌরভে মধুর। আধো আলো ছায়া আর আড়ালে বিকশিত হয় হেমশশী প্রেম। মনে পড়ে যায় চুঁচুড়া, ফরাসডাঙ্গা, শ্রীরামপুর ঘাটের কথা। সেই কোন কালে সে ঘাটে তরী ভিড়িয়েছিল হেন্সম্যান অ্যান্টনির পূর্ব পুরুষ। তারপর কত ঢেউ বয়ে গেল। বাঙালি ঘরের বাল্য বিধবা সৌদামিনীর প্রেমে পড়লেন অ্যান্টনি কবিয়াল। বললেন খ্রিষ্ট আর কৃষ্টে কোনও বিভেদ নেই। সৌদামিনী আর সাহেব ঘর বাঁধলেন। সে দেবী দুর্গার আবাহন হবে। কিন্তু আগুন আর হিংসার গ্রামে তছনছ হয়ে গেল সাহেব আর সৌদামিনীর জীবন।
সেদিনের প্রেম হারিয়েছে। তবু ছাতিম ছাড়ে না। ফুল ঝরিয়ে গন্ধে পাগল করে জানান দেয় শরৎ এলো ওই। পুজো ডাকে প্রেম ডাকে। পাড়ায় দেখায় নন্দিনীর মুখ মনে পড়ে। লম্বা বেণী, কাঁধে ঝোলা, হাতে ধরা বই খাতা, নামানো চোখে লজ্জার আড়। তবু কথা তো চোখে চোখে হবেই। চালাচালি চিঠির খাম। এগলি সেগলি পার হয়ে সাইকেলের দৌড়- একবার যদি উত্তম কুমার বলে ডাক দেয়। বসন্তের বিলাপ ক্যানে আসে শরতেও। তবে সবাই বোধহয় বিলাপ করে না। উদ্ধত যৌবনের বেশে রাস্তার ধারে ডাক দিয়ে বলে, ‘কে তুমি নন্দিনী, আগে তো দেখিনি’।
বাঙালি প্রেমের দুই দিন। এক আছে সরস্বতী পুজো অন্যটা অষ্টমীর সকাল। নতুন শাড়ি, ভেজা চুলে অপরূপা। পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র বলতে বলতে খুলে যায় আধখানা চোখ, ‘ও কি আমায় দেখছে’। যদি না দেখে টিপ করে ফুল ছুঁড়ে দিলে কেমন হয়? খুব কি রেগে যাবে? যদি যায় তাহলে দশমীর নাড়ু খেতে সরাসরি বাড়ি।
নব্বই দশকে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল একটি ঠাণ্ডা পানীয়র বিজ্ঞাপন। ফি পুজঅয় ফিরে আসে সেই গান। আজও ফেরে বাঙালির মুখে মুখে। বিগত দশকগুলোতে আরও বিজ্ঞাপনের গান এমন জনপ্রিয় হয়েছিল কিনা মনে পড়ে না। চার লাইনের এক গান আজও বাঙালির পুজো প্রেমের আন্তরিক পাঁচালি।
সপ্তমীতে প্রথম দেখা
অষ্টমীতে হাসি
নবমীতে বলতে চাওয়া তোমায় ভালবাসি
দশমীতে হঠাৎ কেন আকুল হল প্রাণ
প্রাণ প্রতিমা তুমি এবার যাবে কি ভাসান
আড্ডা, শপিং, প্যান্ডেল হপিং, অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে বিজয়া দশমীর ভাসান হয়ে সুজয়দা–পুচকির প্রেমটা কিন্তু চলছেই... চিয়ার্স!