প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয় কয়েক মিনিটের জন্য। কিন্তু সেই ব্যবহারের দাম যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আন্দাজেরও বাইরে। যার দাম প্রতিটা মুহুর্তে দিয়ে চলেছে প্রকৃতি। সমুদ্রতল থেকে হিমালয় সর্বত্র প্ল্যাস্টিকের ভয়াবহতা।
‘সিঙ্গেল ইউস প্লাস্টিক’ আর ‘ডিসপোজেবল প্লাস্টিক’ দুই ক্ষেত্রেই সমস্যা একই। দেশে বার্ষিক ৯.৪৬ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়।
২০১৯ সালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’-এর ব্যবহার বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছিলেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে। ‘ক্লিন ইন্ডিয়া মিশন’-এ ২০২০-র মধ্যে দেশ প্লাস্টিক শূন্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
কিন্তু সমস্যা জমা প্লাস্টিক নিয়ে। বিপুল পরিমান জমা প্লাস্টিক পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে বারবার।
তবে বর্জ্য প্লাস্টিকের মৃত্যু নেই। মাটিতে মেশে না। আগুনে পোড়ালে তৈরি হয় বিষাক্ত গ্যাস, যা আরও ব্যাপকভাবে ক্ষতি করে বায়ুকে।
অবশেষ বলে এই পদার্থের কিছু হয় না। তবে এক রূপ থেকে আর এক রূপে বদলে যেতে পারে। সেই দিকটিই নয়া দিশা দেখাচ্ছে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে।
বাতিল, জমে যাওয়া বিপজ্জনক প্লাস্টিক পদার্থ বদলে যাচ্ছে চেয়ার, টেবিল, আসবাবের মতো জরুরী জিনিসে। পুরো বিষয়টি নেপথ্যে বাঙালি গবেষক ড. শান্তনু ভৌমিক। কোয়াম্বাটরের অমৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোস্পেস বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং গবেষক।
চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট এই ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য আসবাব, বাড়ির শেড তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দশগ্রাম হাইস্কুলে রিসাইকেল শেড ব্যবহার করা হয়েছে।
ফুটপাত, রুফ-টাইলস তৈরিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে বর্জ্য প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের তৈরি এই রিসাইকেল পণ্যগুলি দীর্ঘমেয়াদীও। শুধু প্লাস্টিক নয় থার্মোকল বর্জ্যকেও একই প্রযুক্তিতে পুনঃব্যবহার যোগ্য করে তুলেছেন তিনি।
আসবাব ছাড়াও সাধারণ মানুষের ব্যবহার যোগ্য একাধিক রিসাইকেল পণ্য তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে।
বর্জ্য প্লাস্টিককে রিসাইকেল প্রযুক্তিতে ফের ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সাড়া ফেলেছে সব মহলে। মিলেছে সরকারী ছাড়পত্রও। সেই সঙ্গে নয়া কর্মস্থানের দিশাও দেখাবে বলেও আশাবাদী শান্তনুবাবু।
অতীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বিশেষ ধরনের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তৈরী করেছিলেন এই বিশিষ্ট গবেষক। ‘রিসাইকেল্ড প্রোডাক্ট’ থেকেই যার জন্ম। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর সেই আবিষ্কার।