বাঙালিদের কাছে কোনো কাজই অসম্ভব নয়। একদিকে বাঙালি বিজ্ঞানী আন্দিজ পর্বতের শৃঙ্গে আরোহন করছেন তো অন্যদিকে এক বাঙালি কন্যা সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করছেন।আইটি চাকরি করা ব্যাঙ্গালুরুর মেয়ে বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়ের টেনিসে বা ফ্যাশনে কিন্তু কোনো ইন্টারেস্ট নেই।ইন্টারেস্ট নেই কবিতা বা কার্টুনেও। তার সমস্ত আগ্রহ গিয়ে আবিষ্ট হয়ে সিন্ধুলিপির মধ্যে। সম্প্রতি সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারের পথ খুঁজে দিয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গেছে বহতা। কিভাবে? চলুন জানা যাক......
সম্প্রতি নেচার ব্র্যান্ড-এর পত্রিকা প্যালগ্রেভ কমিউনিকেশন থেকে সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারের এই খবরটি প্রকাশে আসে। জানা যায়, ইতিমধ্যেই বহতার এই বিষয়ে 'ইন্টারোগেটিং ইন্দাস ইনস্ক্রিপশন্স তো আনরাভেল দেয়ার মেকানিসমস অফ মিনিং কনভেয়ান্স' নামক বইটি বিভিন্ন জার্নালে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বহতা জানান, তার প্রথম কাজ যদিও লিপির পাঠোদ্ধার নয়। তার প্রথম কাজ হলো লিপির প্রকৃতি নির্ধারণ। তিনি জানান, এর আগেও সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারের জন্য নানা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হলেও, কিন্তু বেশিরভাগ যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'ফলসিফায়েবল'- তা নয়। এর আগেও যতবার সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়েছে ততবার দেখা গেছে, বাকিরা কেউ একে অপরের নিয়ম মানেন না কিংবা নিজের নিয়মের বাইরে যেতে চান না। বহতা জানান,তিনি এই পদ্ধতিগুলির মাঝে দাঁড়িয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে বিশেষ গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে সমস্ত প্রমান দাখিল করেন। এর সাথে সাথে তিনি চিহ্নগুলি সারিবদ্ধকরণের পদ্ধতিও আবিষ্কার করেন। তিনি জানান, এর ফলে ভবিষ্যতে এই লিপির পাঠোদ্ধার করা আরও সহজ হবে।
বহতা জানান, তার স্বামী একজন বিজ্ঞানী। সেই সূত্রেই তার বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল বহু বিজ্ঞানীর। সেই সূত্রেই তার সাথে আলাপ হয় প্রসিদ্ধ গণিতবিদ রণজয় অধিকারীর, যিনি সেই মুহূর্তে সিন্ধুলিপি নিয়ে কাজ করছিলেন।তিনি তাকে অনুরোধ করে তার প্রজেক্টে কাজের সুযোগ পান। এই নিয়ে বাকিরা যেইভাবে এগোয় সেইভাবে এগোনোর ইচ্ছে ছিল না বহতার। তার ইচ্ছে ছিল গাণিতিকভাবে বিষয়টি প্রমান করার। এই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রথমে কাজের সুযোগ পেলেও শেষমেশ হাতছাড়া হয়ে যায়। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। ২০১৫ সালে তিনি অফিস থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে সিন্ধুলিপি নিয়ে তার নিজের মনে যেসব সংশয় ছিল তার সমাধান খোঁজেন। সমাধানের সাথে তার নিজের জ্ঞান সম্পূর্ণভাবে মিলে যাওয়ার ফলে তিনি অফিস থেকে রিজাইন করেন। এরপর তিনি ১০ মাসের মধ্যে ব্যাক তো ব্যাক দুটি পেপার লেখেন। তার মধ্যে একটি ছিল সিন্ধুলিপির স্ট্রাকচারাল দিকগুলি নিয়ে এবং অপরটি ছিল সেই লিপিতে লেখা বাক্য বা ব্যাক্যাংশগুলির অর্থ কি তা বুঝতে চেয়ে। ২০১৬ সালে এই কাজ নিয়ে করা তার প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলো সম্প্রতি অর্থাৎ তিন বছর পরে। তার দ্বিতীয় গবেষণাপত্রটি নিয়ে রিভিউ চলছে বলে জানিয়েছেন এই বাঙালি কন্যা।
তার গবেষণা থেকে জানা যায়, সিন্ধুলিপি মূলত শব্দচিত্রের সংমিশ্রনে লিখিত লিপিবিশেষ। তার গবেষণাপত্রে এই দাবির সপক্ষে তিনি যুক্তিও দেখিয়েছেন। এতকিছুর পরেও তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন এই কাজটি পাঠোদ্ধারের কাজ নয়। পাঠোদ্ধারের কাজ আসছে আরও পরে। বাঙালি কন্যার এহেন আবিষ্কারের ফলে খুশি প্রত্নতাত্বিকগণ। বহতার আবিষ্কারে খুশি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিজ্ঞানমহল।