কল্পবিজ্ঞান ও বাংলা সাহিত্য - পর্ব ৬

মহাবিশ্বের এক গ্রহ। নাম মিলক। অনন্ত অন্তরীক্ষের এই অসীম রহস্যময় গ্রহের দিকে যাত্রা করছে তিন বৈজ্ঞানিক। কমান্ডার পানকিন, মেজর ধীমান ব্যানার্জি এবং ক্যাপ্টেন লাইলা। তাঁরা যাত্রা করছেন একটি রকেটে চেপে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ওরা।

সকলের চোখেই বেপরোয়া দীপ্তি। ক্যাপ্টেন লাইলা থট-রিডিং অর্থাৎ মানুষের চিন্তা আগে থেকে জেনে ফেলার এক আশ্চর্য যন্ত্র আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পৃথিবীকে। বাকি দুজন বৈজ্ঞানিকের ঝুলিতেও রয়েছে এমন সব আশ্চর্য আবিষ্কারের কৃতিত্ব।

আপাতত এই তিনজন বৈজ্ঞানিকের গন্তব্য মিলক গ্রহ। কি আছে এই মিলক গ্রহে? মানুষের থেকেও নাকি উন্নত কোন প্রাণী। তাঁদের চিন্তাভাবনা, খাওয়া-দাওয়া সব কিছুই নাকি অন্য রকম। তার খোঁজে চলেছে এই বিজ্ঞানীরা।

এই খোঁজ আর তার সমাধান ঘিরেই জন্ম নেয় রহস্য। কল্পবিজ্ঞানের রহস্য। আর সেইসব অতিপ্রাকৃত রহস্যের সমাধান করেছেন এই তিন বিজ্ঞানী। কিভাবে সমাধান করেছেন? অবশ্যই কল্পবিজ্ঞানের কাহিনীর সৃষ্টিকর্তার কলমের হাত ধরে। সৃষ্টিকর্তার নাম অদ্রীশ বর্ধন।

Adrish1

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কিংবদন্তি কল্পবিজ্ঞান লেখক অদ্রীশ বর্ধন।

১৯৩২ সালের পয়লা ডিসেম্বর এই লেখকের এর জন্ম হয় কলকাতায়। একটি বেসরকারি সংস্থায় ব্যবসার নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করেছিলেন।

কিন্তু সাহিত্যের প্রতি অসীম অনুরাগ ছিল তাঁর। আর রহস্য গল্প তাঁকে চুম্বকের মতো টানত। হিসেব-নিকেশের পাঠ চুকিয়ে শুরু করলেন গল্প লেখা। হাতেখড়ি হল রহস্য গল্প দিয়ে। তারপর সেই রহস্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন বিজ্ঞানের কল্পনা। জন্ম হল তাঁর কল্পবিজ্ঞানের আশ্চর্য সব কাহিনীর।

তাঁর সৃষ্টি 'ডিটেকটিভ ইন্দ্রনাথ রুদ্র', 'লেডি ডিটেকটিভ নারায়নী' এবং 'প্রফেসর নাট বল্টু চক্র' বাঙালি পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে।

কিন্তু একটা বিষয় লেখককে বারবার অস্থির করে তুলছিল। সকলের বই কিনে পড়ার সাধ্য কোথায়? আর স্মার্টফোন বা ডিজিটাল বই পড়া তখনও সেই ভাবে প্রচলিত হয়নি। কিন্তু লেখক চাইতেন তাঁর সৃষ্টি সকল পাঠকের কাছে পৌঁছে যাক। বিশেষ করে তাঁর কল্পবিজ্ঞানের গল্পগুলো।

ভারতবর্ষে প্রথম বার কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী নিয়ে তিনি শুরু করলেন একটি পত্রিকা। ১৯৬৩ সাল থেকে। পত্রিকাটির নাম 'আশ্চর্য'। তবে এই পত্রিকাটি তিনি সম্পাদনা করতেন ছদ্মনামে। আকাশ সেন ছদ্মনামে 'আশ্চর্য' পত্রিকাটি ছ'বছর সম্পাদনা করেছিলেন।

Adrish2

কল্পবিজ্ঞানের মণিমুক্তো মেশানো সেইসব সাহিত্য আজও পাঠকদের আশ্চর্য করে।

তিনি প্রথমবার কল্পবিজ্ঞান নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। কল্পবিজ্ঞানকে সকলের সামনে উজ্জ্বল করে মেলে ধরেছিলেন এই লেখক।

এছাড়াও কল্পবিজ্ঞান সংক্রান্ত অন্যান্য পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন তিনি।

তাঁর বেশিরভাগ রহস্য কাহিনীগুলিই কল্পবিজ্ঞানের স্পর্শে চমৎকার সাহিত্যের নিদর্শন।

'মাকড়সা আতঙ্ক', 'হাঙ্গরের কান্না', 'মিলক গ্রহে মানুষ', 'হাজার রহস্যের দ্বীপ ইস্টার আইল্যান্ড' সবই বাংলা সাহিত্যের 'হিরে-মানিক'।

তাঁর কল্পবিজ্ঞান লেখা কম বয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি কিশোর জ্ঞান-বিজ্ঞান সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তাঁকে বিশেষ ‘কল্পবিশ্ব সম্মাননা’ দেওয়া হয়েছিল।

২০১৯ সালে বয়স জনিত সমস্যার কারণে মৃত্যু হয় অদ্রীশ বর্ধনের। তবে কল্পবিজ্ঞানের জগতে তাঁর অস্তিত্ব আজও সূর্যের মত উজ্জ্বল।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...