আমাদের এই শহরে শীত বড় তাড়াতাড়ি চলে যায়। পথের ধারের পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া জানান দেয় বসন্ত এসে গিয়েছে। বাজারে তখনও কিন্তু শীতের শেষ বেলার সবজি। বেলাশেষের সবজি আর বাঙালির নিজস্ব কিছু মাছের রান্না রইল আজকের লেখায়। যেসব রান্নার সঠিক স্বাদ নিতে হলে চাই গরম গরম ভাত।
চিতল মাছের ঝাল
পুরোনো দিনের রান্নায় চল ছিল বাটা মশলার। সেই বাটা মশলা দিয়েই আজ রাঁধা হবে চিতলের ঝাল। এই রান্নার জন্য লাগবে চিতল মাছের পেটি।
কী কী লাগবে
চিতলের পেটি-৫০০গ্রাম
কড়াই ডালের বড়ি-আন্দাজমতো
গোটা জিরে-৩ চা-চামচ
গোটা ধনে-১ চা চামচ
গোলমরিচের দানা-১০ টা
টমেটো-২ টো ( বড়)
শুকনো লঙ্কা-৪টে
হলুদ গুঁড়ো-৩ চা চামচ
কাঁচা লঙ্কা-৪টে
আদা-৩০ গ্রাম
সর্ষের তেল-রাঁধবার জন্য
কালোজিরে- ফোড়নের জন্য
মেথি- ফোড়নের জন্য(অল্প)
নুন- আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
চিতল মাছের পেটি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। আদা বেটে নিতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে প্রথমে বড়িগুলো ভেজে নিতে হবে। তারপর নুন- হলুদ মাখানো মাছগুলো ভাজতে হবে। গোলমরিচ-জিরে-ধনে-শুকনো লঙ্কা বেটে নিতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে সর্ষের তেল গরম করে কালোজিরে ও সামান্য মেথি ফোড়ন দিয়ে জিরে-ধনে ইত্যাদির বাটনাটা দিয়ে দিতে হবে। টমেটো কুচি করে দিতে হবে। বাটা মশলা দিয়ে রান্না করা হচ্ছে বলে কষাতে একটু সময় লাগবে। অল্প জল বারবার দিয়ে মশলা কষাতে হবে। মশলা থেকে তেল ছেড়ে দিলে জল দিতে হবে। নুন আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে ফোটাতে হবে। ফুটে গেলে ভাজা মাছ আর ভাজা বড়ি দিয়ে ফুটিয়ে ঝোল গাঢ় হলে নামিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশন করতে হবে গরম ভাতের সঙ্গে।
কাঁচা টমেটোর ঘন্ট
কী কী লাগবে
কাঁচা টমেটো-৩০০গ্রাম
বিউলি ডালের বড়ি-৫০ গ্রাম
কাঁচা লঙ্কা-২-৩টে
সর্ষের তেল-রাঁধবার জন্য
ধনেপাতা-১/২ আঁটি
শুকনো লঙ্কা-২-৩ টে
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো-স্বাদ অনুযায়ী
কাঁচা লঙ্কা-২-৩টে
আদা-২০ গ্রাম
চিনি-১ চা চামচ
নুন-আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
কাঁচা টমেটো ভালো করে ধুয়ে ছোট টুকরো করে নিতে হবে। আদা বেটে নিতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করে বড়িগুলো ভেজে রাখতে হবে। জিরে আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে কাঁচা টমেটোর টুকরোগুলো দিয়ে নেড়েচেড়ে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, আদাবাটা দিয়ে কষাতে হবে। চিনি ও নুন দিয়ে, সামান্য জল দিয়ে নাড়তে হবে। কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে গ্যাসের আঁচটা কমিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। মিনিট চারেক পরে ঢাকা তুলে দেখতে হবে টমেটো সেদ্ধ হয়েছে কী না। সেদ্ধ হয়ে গেলে ভাজা বড়িগুলো আধভাঙা করে দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে আঁচ বাড়িয়ে নাড়াচাড়া করে ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামালেই তৈরি হয়ে যাবে কাঁচা টমেটোর ঘন্ট। খাবার জন্য সঙ্গে চাই গরমা গরম ভাত আর কিচ্ছু না
চিংড়ি বড়ার ঝোল
চিংড়ি বড়ার ঝোল রাঁধতে হলে ফুলচিংড়ি অথবা খুব ছোট চিংড়ির প্রয়োজন। ফুলচিংড়ি পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। ছোট চিংড়ি হলে মাথার অংশ ফেলে দিয়ে পিঠের শিরা ফেলে ধুয়ে নিতে হবে। ছোট চিংড়ি মিক্সি বা শিলপাটায় বেটে নিতে হবে। তবে ফুলচিংড়ির সে ঝামেলা নেই। এবার আসা যাক রান্নার পদ্ধতিতে।
কী কী লাগবে
ফুলচিংড়ি বা ছোট চিংড়ি --২৫০ গ্রাম
চন্দ্রমুখী আলু-২৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ-২৫০ গ্রাম
টমেটো-২০০ গ্রাম
আদা-৩০ গ্রাম
রসুন-১ টা( ছোট)
শুকনো লঙ্কা-ফোড়নের জন্য
গোটা গরমমশলা-২ টো ছোট এলাচ,২ টো দারচিনি, ২ টো লবঙ্গ
হলুদ গুঁড়ো-২ চা চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো-আন্দাজমতো
জিরে গুঁড়ো-১ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো-২ চা চামচ
চালের গুঁড়ো-২ চা চামচ
ময়দা-২ চা চামচ
সাদা তেল- ময়ান দেবার জন্য
সর্ষের তেল- রাঁধবার জন্য
ধনেপাতা-১ আঁটি
কাঁচালঙ্কা-৩-৪ টে
গরমমশলা গুঁড়ো-১ চা চামচ
ঘি-১ চা চামচ
চিনি-আন্দাজমতো
নুন-আন্দাজমতো
কীভাবে রাঁধতে হবে
ফুলচিংড়ি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। একটা বাটিতে ফুলচিংড়ি, চালের গুঁড়ো, ময়দা, একটা পেঁয়াজকুচি, কাঁচালঙ্কা কুচি,অল্প আদা-রসুনবাটা, সামান্য নুন আর সাদা তেল দিয়ে মেখে নিতে হবে। এই মাখায় ধনেপাতা কুচি ও দেওয়া যায়। যদি ছোট চিংড়ি বাটা নেওয়া হয় তবে ফুলচিংড়ির বদলে ছোট চিংড়ি বাটা নিতে হবে। চন্দ্রমুখী আলু খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে নিতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করে পছন্দ মতো আকারের বড়া ভেজে নিতে হবে। ওই তেলেই আলু ভেজে রাখতে হবে। তেল কমে এলে আবার তেল দিয়ে গরম করে শুকনো লঙ্কা আর গোটা গরমমশলা ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়নের গন্ধ বের হলে পেঁয়াজবাটা, আদা-রসুনবাটা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো আর টমেটো কুচি দিতে হবে। দিতে হবে চিনি। কষতে হবে। মশলার জল শুকিয়ে এলে সামান্য জল দিয়ে কষতে হবে। বারবার করে জল দিয়ে মশলা কষতে হবে। মশলা থেকে তেল ছেড়ে দিলে জল দিয়ে নুন আর কাঁচালঙ্কা চিরে দিতে হবে। ঝোল ফুটে উঠলে আলুর টুকরোগুলো দিয়ে ফোটাতে হবে। আঁচ একটু কমিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করলে আলুগুলো সেদ্ধ হয়ে আসবে। তখন চিংড়ি বড়াগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে ঝোল গাঢ় হয়ে এলে গরমমশলাগুঁড়ো আর ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামিয়ে ওপরে ঘি ছড়িয়ে থেকে রাখলেই তৈরি চিংড়ি বড়ার ঝোল। পরিবেশনের সময় সঙ্গে থাকুক গরম গরম ভাত।