১৯৬৬-তে কিংবদন্তি পরিচালক তপন সিনহা তাঁর ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’-তে এক ছিঁচকে চোর-এর ছোট্ট রোলে কাস্ট করেছিলেন তাঁকে, সেই তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সে যুগের তাবড়-তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, কিন্তু তাঁদের মাঝেই স্বল্পদৈর্ঘের উপস্থিতিতে এক ছিঁচকে চোরের পার্টেই বুঝিয়ে ছেড়েছিলেন তিনি একজন জাত অভিনেতা। তিনি বাঙালির ‘টেনিদা, একজন ‘কমপ্লিট কমেডিয়ান’ চিন্ময় রায়। রবিবার (১৭ মার্চ) ৭৮ বছর বয়সে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ চলে গেলেন সেই গুণীজন।
গতবছর জুন মাসে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন তিনি। জানা যায়, সেই আঘাত থেকেই পরের দিকে সেপটিসেমিয়া হয়ে যায়। সেপটিসেমিয়ার জের তো ছিলই, গতকাল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সল্টলেকে তাঁর বাসভবনে রাখা রয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের এই স্বনামধন্য অভিনেতার মরদেহ ৷ আগামিকাল মঙ্গলবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
তাঁর জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লায়। ১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি। রুপালি পর্দায় কমেডিয়ান হিসেবে জনপ্রিয় হলেও অভিনয় জগতে চিন্ময় বাবুর শুরুটা হয়েছিল থিয়েটারের মঞ্চে। দুই বাংলা-দেশেই সমান জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ধন্যি মেয়ে, বসন্ত বিলাপ, ননীগোপালের বিয়ে, চারমূর্তির মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে দর্শকদের মনে। তাঁর প্রথম ছবি তপন সিনহার ‘গল্প হলেও সত্যি’। ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’-এ তিনি কাজ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে। ওই ছবিতে তার চরিত্রটি ছিল হাল্লার মন্ত্রীর গুপ্তচরের। তবে যে ছবিটির মুখ্য চরিত্রে তার অভিনয়ের জন্য বাংলা ছবির সব দর্শকের হৃদয়ে একটি নিজস্ব জায়গা তৈরী করতে পেরেছিলেন তিনি, সেটি হল- ‘চারমূর্তি’র টেনিদা।
‘বসন্ত বিলাপ’ছবিতে তাঁর সংলাপ ‘একবার বলো উত্তমকুমার!’, এখনও সবার প্রিয়। শারীরিক অসুস্থতা এবং অন্যান্য কারণের জন্য বহুদিন আর কোনো ছবিতে কাজ করছিলেন না তিনি। যে কারনে খুব একা হয়ে পড়েছিল তাঁর নিজস্ব জগৎ। শেষ ছবিটির কাজ করেন ২০১৩ সালে এক ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পরিচালকের সঙ্গে।
নিজের অভিনয় শৈলী আর সৃজনশীলতায় হাসাতে হাসাতেই শিখিয়ে গেলেন বাস্তবতার অনেক দর্শন। তাঁকে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ ‘স্যাটায়ারিস্ট’ বললেও বোধহয় অত্যুক্তি করা হবেনা। তাঁর বডি-ল্যাঙ্গুয়েজই ছিল আলাদা মাপের। নিজের সময়ের সেরা অভিনেতাদের পাশাপাশি কাজ করার পরেও স্বমহিমায় নিজের অভিনীত চরিত্রে উপস্থিতি জানান দিয়ে গিয়েছেন তিনি। একাধিক বাংলা ছবিতে হাস্যরসাত্মক নানা চরিত্রের সফল উপস্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে নির্ভেজাল-অমলিন-চিরন্তন ‘হাসি’ উপহার দিয়ে বিদায় নিলেন কিংবদন্তি চিন্ময় রায়।