কৈশোর মানেই খোলা আকাশ। মেঘের মতো ভেসে বেড়ানো যায় কল্পনার জগতে। রহস্যের গন্ধ, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা মিলেই পরিপূর্ণ হয় কৈশোর। এমনই সব অভিজ্ঞতার সম্ভার পান্ডব গোয়েন্দার গল্প। বাবলু, বিলু, ভোম্বল - তিনটি ছেলে। বাচ্চু,বিচ্চু - দুটি মেয়ে। এই পাঁচজনকে নিয়েই পান্ডব গোয়েন্দা। এদের অভিযানগুলো প্যাঁচালো, জটিল নয়। সরলতায় মাখানো, অথচ কি সাহসী। তুখোড় বুদ্ধির অধিকারী এই পাঁচ দস্যি। এদের অভিযান মানেই ঘটনার ঘনঘটা। নিত্যনতুন পটভূমি। প্রতি ক্ষণে চমক। তবে সেই চমকের আড়ালে হারিয়ে যায় না সারল্য। এমন ভাবেই পান্ডব গোয়েন্দার গল্পগুলো সৃষ্টি করেছেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। হাওড়ায় বাস করা এই কচিকাঁচাদের দলের অভিযানের দুঃসাহসিক কাহিনীগুলো প্রথমে প্রকাশিত হতো নানান পত্র-পত্রিকায়। পরে তা বই আকারে প্রকাশিত হয়। স্বভাবতই শিশু-কিশোর সকলের মন জয় করে নেয় এই গোয়েন্দা কাহিনীগুলো। বয়সের গণ্ডি পেরিয়ে এই অভিযানমূলক গোয়েন্দা গল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রে আজও নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে।
বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা মানেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিযুক্ত কোন মানুষ। সেই গোয়েন্দাকে সঙ্গ দেয় তেমনই বুদ্ধিদীপ্ত সহযোগী। পান্ডব গোয়েন্দার গল্পগুলো এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারুণ্যে ভরা কিছু ছেলে মেয়ে নেহাতই অ্যাডভেঞ্চারের আকর্ষণে শুরু করে অভিযান। সমাধান করে রহস্যের। সেই পথে তাদের সঙ্গ দেয় একটি কুকুর। পঞ্চু। তার একটা চোখ নেই। একের পর এক দুঁদে শত্রুর পাল্লায় পরতে থাকে এরা। রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রে কোন পশুর এইভাবে যোগদান গোয়েন্দা সাহিত্যে প্রথম। যা পান্ডব গোয়েন্দা গল্পের আকর্ষণের অন্যতম প্রধান কারণ। সত্তরের দশকে প্রথমবার শুকতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় পান্ডব গোয়েন্দার গল্প। প্রথম বই আকারে আসে ১৯৮১ সালে। তিরিশটিরও বেশী অভিযানের কাহিনী এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। এই গোয়েন্দা কাহিনীতে বাবলু পঞ্চপাণ্ডবদের নেতৃত্ব দেয়। সকলে একজোট হয়ে দুঃসাহসিক অভিযান সম্পন্ন করে। রহস্যমূলক হলেও কাহিনীগুলি কোথাও যেন এক সূত্রে বেঁধে থাকার ইঙ্গিত দেয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার পথে এইসব কাহিনী রীতিমতো দিকদর্শন।
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪১ সালে। মধ্য হাওড়ার খুরুট, ষষ্ঠীতলায়। কিশোর বয়স থেকেই তাঁর সাহিত্য সাধনার শুরু। লেখক অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। তাই দেশে দেশে ঘুরে যে দুর্লভ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তার প্রতিটি ঘটনার কাহিনী নির্মাণে ও চরিত্র চিত্রণে। সাহিত্যের জগতে পান্ডব গোয়েন্দা রত্নের মতই দামি। পান্ডব গোয়েন্দার প্রথম অভিযান শুরু হয় তাদের পরিচিত গন্ডির মধ্যেই। পরে তা সুদূরপ্রসারী হয়। পঞ্চপান্ডব কৈশোর বয়সে তাদের অভিযান শুরু করলেও রহস্যের হাত ধরে যৌবনে পৌঁছেছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চিন্তাভাবনার পরিপূর্ণতা প্রকাশ পেয়েছে গল্পগুলোতে। শুরুর দিকে পান্ডব গোয়েন্দাদের অভিযানগুলো অল্প পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে তা বিস্তৃতি লাভ করেছে। গঙ্গার ঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া একটা মানিব্যাগ তাদের নিয়ে গেছে মধ্যপ্রদেশ অবধি। সেই জটিল রহস্য জাল ভেদ করে তারা হাসিমুখে আবার ফিরে এসেছে তাঁদের শেকড়ের কাছে। সিনেমার পর্দায় অনুপ্রবেশ ঘটেনি এখনও এই গোয়েন্দা দলের। তবে মেগা সিরিয়াল বা কার্টুন ও অ্যানিমেশনের মাধ্যমে পান্ডব গোয়েন্দা পৌঁছে যাচ্ছে দর্শকদের কাছে। কংক্রিটের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার শৈশবের কাছে পান্ডব গোয়েন্দা দলের গল্প যেন এক ঝলক টাটকা বাতাস।