হাম,পক্স হলে কী খেতে হবে
বসন্ত ঋতুরাজ। তার আগমনে প্রকৃতিতে আনন্দের হিল্লোল উঠলেও তার সমনামের রোগটি কিন্তু আদৌ নিরীহ নয়। শীত শেষে গাছে যখন নতুন পাতা তখনই ভাইরাস ঘটিত পক্স আর হামের আক্রমণে শিশু থেকে বুড়ো সকলেই নাজেহাল হয়ে পড়ে। মূলত বসন্তকালে এই সব অসুখ দেখা দিলেও বছরের অন্য সময়েও এদের সংক্রমণ দেখা যায়। হাম মূলত ছোটদের হলেও বড়রাও আক্রান্ত হয়। এই সব সংক্রামক ব্যাধির হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে বাঙালি পরিবারে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাবার প্রথা যথেষ্ট প্রাচীন। একটা সময় এই রোগে আমিষ খাওয়ার ওপর ছিল নানা নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু আধুনিক ডাক্তারি মতে এই রোগের সঙ্গে যুঝতে চাই প্রোটিন ডায়েট। তাই মাছ, মুরগির মাংস ও ডিম যেন রোগীর খাদ্যতালিকা থেকে বাদ না পড়ে। এর সঙ্গে চাই সজনে ডাঁটা, পেঁপে ইত্যাদি। এই সব খাদ্যবস্তু কীভাবে খেতে হবে তার নির্দেশ রইল আজকের রেসিপিতে। রইল অল্প তেল মশলার সুস্বাদু এমন কিছু পথ্য যা খেলে হাম, পক্সেও শরীরের জোর থাকবে অটুট।
মাগুর মাছের সুরুয়া(সুপ)
শিং বা মাগুর মাছ সুরুয়া রান্নার পক্ষে আদর্শ। এই রান্নাটি রোগীর অত্যন্ত উপযোগী।
কী কী লাগবে
শিং বা মাগুর(দেশি)- ২৫০ গ্রাম
পটোল-১০০ গ্রাম
আলু-১০০ গ্রাম
কচি সজনে ডাঁটা-৫০ গ্রাম
হলুদ গুঁড়ো-৩ চা চামচ
গোটা গোলমরিচ - ৬ টা দানা
গোটা ধনে-১ চা চামচ
গোটা জিরে-সামান্য
পেঁয়াজ-৫০ গ্রাম
রসুন-২ কোয়া
আদা-১০ গ্রাম
সর্ষের তেল-অল্প
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
কীভাবে রাঁধতে হবে
মাছ কেটে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। রসুন কুচি করে নিতে হবে। আদা আর পেঁয়াজ থেঁতো করে নিতে হবে। সজনে ডাঁটা ধুয়ে নিয়ে টুকরো করে রাখতে হবে। কড়াইতে অল্প তেল দিয়ে মাছ হালকা করে ভেজে নিতে হবে।এবার একটা মাঝারি ডেকচিতে অর্ধেকের বেশি জল দিয়ে গ্যাসে বসাতে হবে। জল গরম হলে কেটে রাখা সজনে ডাঁটা, আলু, পটোল, হলুদ গুঁড়ো, থেঁতো করা আদা-পেঁয়াজ, গোটা গোলমরিচ, গোটা ধনে দিয়ে ফোটাতে হবে। ফুটন্ত জলের ওপরের সর তুলে ফেলে দিতে হবে। আলু-পটোল সেদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে।একটা বড় বাটির ওপরে ফুটো ফুটো থালা বসিয়ে থালায় সেদ্ধ করা মাছ তরকারির সুপ ঢেলে দিতে হবে। এবার পটোলের বীজগুলো বেছে ফেলে দিতে হবে। সজনে ডাঁটা থেকে রস চিপে নিয়ে ছিবড়ে ফেলে দিতে হবে।মাছের কাঁটা ভালোভাবে বেছে নিয়ে মাছ, আলু ও পটোল আদা পেঁয়াজ সহ ভালোভাবে মিশিয়ে আদা আর পেঁয়াজের টুকরো সরিয়ে রাখতে হবে।সব মিশে গেলে থালার তলার বড় বাটির থেকে সুপটা নিয়ে মেশাতে হবে। কড়াইতে সামান্য তেল দিয়ে রসুন কুচি ও গোটা জিরে ফোড়ন দিয়ে মাছ-সবজির মিশ্রণটা ঢেলে দিয়ে একটু ফুটিয়ে নিলে তৈরি হয়ে যাবে মাছের সুরুয়া। খেতে দিতে হবে গরম, একটু গলা ভাতের সঙ্গে। রোগীর ভাত হবে নরম, একটু গলে গেলেই ভালো।
নিমপাতার শুক্তো
কথায় বলে, “ নিমের হাওয়া ভালো। কতটা ভালো তা ধরা আছে বেদের সূক্তে। নিমের রস যেমন শরীরকে ভেতর থেকে সতেজ রাখে তেমনই জলবসন্ত রোগের গুটি তখন শুকোয় তখন যে তীব্র চুলকানির অনুভূতি হয় তখন ডালশুদ্ধু নিমপাতা শরীরে বোলালে যেমন আরাম পাওয়া যায় তেমন আবার তা শরীরের পক্ষে উপকারীও।প্রাচীন সূত্রে এমনও বলা আছে যে বসন্তকালে ভ্রমণ, নিমপাতা ভক্ষণ ও তন্বীর সান্নিধ্য যে না পেয়েছে তার জীবন তুচ্ছ। বহু রোগ প্রতিষেধক এই পাতাটি দিয়ে বসন্ত রোগীর জন্য হালকা অথচ পুষ্টিকর এক শুক্তো রান্নার রেসিপি রইল আজকের লেখায়।
কী কী লাগবে
কচি নিমপাতা-১ আঁটি
আলু-৪ টে ( মাঝারি)
বেগুন-১ টা( মাঝারি)
রাঙা আলু- ৪টে
কচি সজনে ডাঁটা- ৫টা
শিম-৫টা
হলুদ গুঁড়ো-সামান্য
ধনে গুঁড়ো-২ চা চামচ
পাঁচফোড়ন- ফোড়নের জন্য
সর্ষে-ফোড়নের জন্য
আদা-অল্প
তেজপাতা- ফোড়নের জন্য
সর্ষের তেল- অল্প
চিনি- সামান্য
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
কীভাবে রাঁধতে হবে
কচি নিমপাতা ডাল থেকে ছাড়িয়ে ধুয়ে নিতে হবে। আদা খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিতে হবে। আলু আর রাঙা আলু ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে চার টুকরো করে আবার ধুয়ে নিতে হবে। শিম ধুয়ে দু টুকরো করতে হবে। কড়াইতে অল্প তেল দিয়ে গরম করে নিমপাতা ভেজে তুলে রাখতে হবে। এবার পাঁচফোড়ন ও সর্ষে মিশিয়ে ফোড়ন দিয়ে সব তরকারি দিতে হবে। তরকারি হালকা ভাজা হলে হলুদ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, নুন আর চিনি দিয়ে মিশিয়ে জল ঢেলে দিতে হবে। তরকারি সেদ্ধ হয়ে এলে নিমপাতা ভাজা আর আদাবাটা দিয়ে সামান্য ফুটিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে হাম- জলবসন্তের রোগীর আদর্শ পথ্য নিমপাতার শুক্তো। খাবার সময় সঙ্গে দিতে হবে নরম গলা ভাত।
চিকেন পিসপাস
হাম ও পক্সের রোগীদের অনেক সময় গলাতেও পক্সের গুটি দেখা যায়। তখন শক্ত খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না। বিশেষত গিলতে কষ্ট হয়।বাঙালি হিন্দু পরিবারে মুরগি খাওয়া শুরু হয় উনিশ শতকে।এ দেশে অ্যালোপাথি চিকিৎসার জনপ্রিয়তাও তখন থেকে। জলবসন্ত ও হামের রোগীর জন্য বিশেষ এই খাবারটির জন্মও তখন থেকে। আজ রইল সেই কবেকার রেসিপি। গিলতে কষ্ট নেই, খেলে দুর্বল শরীরে আসবে বল। হালকা সহজপাচ্য অথচ সুস্বাদু এক রেসিপি চিকেন পিসপাস।
কী কী লাগবে
পুরোনো সরু সেদ্ধ চাল-১৫০ গ্রাম
কচি মুরগির মাংস-২০০ গ্রাম
আলু-১০০গ্রাম
পেঁপে-১টা(ছোট)
গাজর-১টা
পেঁয়াজ-১টা(বড়)
আদা-২০ গ্রাম
গোটা গোলমরিচ-৬-৭টা
তেজপাতা-২ টো
দারচিনি-২-৩ টুকরো
মাখন-২ চা চামচ
চিনি-সামান্য
নুন-স্বাদ অনুযায়ী
কীভাবে রাঁধতে হবে
আদা পেঁয়াজ কুচিয়ে নিতে হবে। আলু, গাজর ও পেঁপে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে নিতে হবে। মুরগির মাংস ভালোভাবে ধুয়ে আলু,গাজর আর পেঁপের সঙ্গে প্রেশার কুকারে আধসেদ্ধ করে নিতে হবে। এই মাংস সেদ্ধর জল থেকে মাংসের টুকরো, গাজর, আলু ও পেঁপের টুকরো তুলে নিয়ে জলটা আলাদা করে নিতে হবে। পুরোনো চাল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে মাংস সেদ্ধর জলে সেদ্ধ করতে হবে। দরকার হলে আরও জল দিতে হবে। চাল প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে পেঁয়াজকুচি, তেজপাতা, আদাকুচি, গোটা গোলমরিচ, দারচিনি( থেঁতো করে) এবং হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিয়ে সেই মাংস ও গাজর দিয়ে ফোটাতে হবে। স্বাদ অনুযায়ী নুন ও চিনি দিয়ে খুব ভালোভাবে নাড়তে হবে যাতে তলায় লেগে না যায়। সব প্রায় গলে গেলে মাখন দিলেই তৈরি হয়ে যাবে রোগীর আদর্শ পথ্য চিকেন পিসপাস।