ভারতের মূল আভ্যন্তরীন সমস্যাগুলি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে উঠে আসছে অপুষ্টির বিষয়। ৫ বছরের নীচে প্রায় ৪৪ % শিশু এখনও এ দেশে অপুষ্টির শিকার। কম বেশি দেশের সব প্রান্তেই একই চিত্র। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে তুলনামূলক বিচার করলে দেখা যাচ্ছে, বড় রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র তামিলনাড়ু ছাড়া প্রায় সকলের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এমনকি দেশীয় গড়ের থেকেও এগিয়ে রয়েছে এ রাজ্য।
শুক্রবার নয়াদিল্লীতে এ কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের শীর্ষস্থানীয় এক কর্তা বিশো প্যারাজুলি। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামে ভারতের পক্ষ থেকে কান্ট্রি ডিরেক্টরের ভূমিকায় নিযুক্ত রয়েছেন তিনি। এ দিন ঘোষণায় রাষ্ট্রপুঞ্জের এই কর্তা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে শিশুদের জীবনে অপুষ্টির ছায়া অনেক বেশি গুজরাত, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে। রক্তাল্পতা থেকে মস্তিকের বৃদ্ধি বা ওজন- বিচারে সবকিছুর নিরিখেই দেশের আর পাঁচটা বড় রাজ্যের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলা।
জন্মের পর মস্তিষ্কের পূর্ণবিকাশ হয়নি সারা দেশে এমন শিশুর হার যেখানে ৩৯.৩ %, সেখানে এই হার উত্তরপ্রদেশে ৪৯ %, গুজরাটে ৩৯.৬ % ও বাংলায় ৩২ %। অপুষ্টির কারণ হিসেবে প্রধান একটি বিষয় উঠে আসছে, গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টির থেকেই সদ্যজাত শিশুরা অপুষ্টির কবলে পড়ে। জন্মের পর ৫ বছর পর্যন্ত যথাযথ পুষ্টি না পাওয়ায় এই হার আরও বাড়ছে। অস্বাভাবিক কম ওজনের নবজাতক জন্মানোর হার সারা দেশে ২১.৪ %, বিহারে ২৩.৪ %, উত্তরপ্রদেশে ২৪.২ %, গুজরাটে ২০.৭ % ও বাংলায় ২০.৮%।
এই হারের কারণেই প্রথম পর্যায়ে ‘ফর্টিফায়েড রাইস’ পেল না বাংলা। যদিও একটি বিবৃতিতে প্যারাজুলি জানিয়েছেন, আগামী দিনে বাংলাতেও এই প্রকল্প চালু করা হবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ভারতের প্রতিনিধি টমিও সিচিরি-র গলাতেও এক সুর ধরা পড়েছে। তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন মিনারেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ এই চালকে কি ভাবে জিনগতভাবে অতি-পুষ্টিকর করে তোলা যায়, তা নিয়েও বিস্তর গবেষণা চলছে।
রাজধানীতে আয়োজিত স্বাস্থ্য-সাংবাদিকতা সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে পুষ্টি নিয়ে একটি আলোচনাচক্রে যোগ দেন প্যারাজুলি। সেখানে তিনি জানান, ধান ফলনের পর তা থেকে উৎপাদিত চালকে বিভিন্ন ট্রিটমেন্টের সাহায্যে অতি পুষ্টিকর চালে (ফর্টিফায়েড রাইস) রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া চলছে বিশ্ব জুড়ে। সম্প্রতি তাতে ভারতও সামিল হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে কেন্দ্রীয় খাদ্য বিষয়ক মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে দেশের ১৫টি রাজ্যে এই কাজ চলছে। তবে সেই রাজ্যগুলির তালিকায় আপাতত ব্রাত্যই রাখা হয়েছে বাংলাকে। পশ্চিমবঙ্গের নাম না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে প্যারাজুলি জানিয়েছেন, শিশুদের অপুষ্টি পশ্চিমবঙ্গে থাকলেও, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় তার পরিসংখ্যান অনেকটাই কম। এ বিষয়ে একেবারে ব্যাকফুটে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, বিহার, রাজস্থান, গুজরাটের মতো রাজ্যগুলি। এ কথা মাথায় রেখেই প্রথম দফায় ‘ফর্টিফায়েড রাইস’ উৎপাদনের কর্মসূচি এইসব অপুষ্ট রাজ্যগুলিতেই গ্রহণ করা হয়েছে।