অবিশ্বাস্য কীর্তি! রাশিয়ায় একডজন দেশকে হারিয়ে সোনা জিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেন বাংলার ঘরের মেয়ে পারমিতা ভট্টাচার্য। বর্তমানে বোলপুর গার্লস স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী পারমিতার এই অনন্য কৃতিত্বে গর্বিত সহপাঠী থেকে শিক্ষিকা, সকলেই।
সূত্রের খবর, সোতোকান ক্যারাটে ও জিৎকুনেডু, মার্শাল আর্টের এই দুই ইভেন্টে বিগত চার বছর ধরে ট্রেনিং নিয়ে চলেছেন শান্তিনিকেতন থানার অন্তর্গত গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা পারমিতা। প্রশিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী কঠোর প্রশিক্ষন নিয়ে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে একাধিক পদক জিতে নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সোনা, ব্রোঞ্জ ও রূপো মিলিয়ে মোট পাঁচটি পদক রয়েছে তার ঝুলিতে।
২০১৭ সালে রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের জন্য ব্রোঞ্জের পদক অর্জন করে নেন এই কৃতি খেলোয়াড়। এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে, গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্তরের খেলায় দুটি রৌপ্য পদক পকেটস্থ করেন তিনি। এর পরের জয়টিও অপ্রত্যাশিতভাবে চলে আসে মাত্র দু মাসের মধ্যেই। ডিসেম্বরে মণিপুরে অনুষ্ঠিত জিৎকুনেডুর জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করে রাশিয়ায় খেলতে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে যান তিনি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে মহারণে নামার জন্য শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম।
ক্যারাটের পাশাপাশি দক্ষতার সাথে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন এই বিশ্বজয়ী। সাফল্যের নেপথ্যে দাঁড়িয়ে সবসময়ই তাঁকে ইন্ধন দিয়ে গেছেন বাবা, মা, প্রশিক্ষক। ক্যারাটের মতো ক্রীড়াকে বেছে নেওয়ার জন্য গ্রামের লোকজনের কাছে বক্রোক্তির স্বীকার হলেও সবসময়ই পাশে পেয়েছেন অভিভাবকদের। সে সময় নীরব থাকলেও আজ এই পদক জয়ই যে তাদের কটুক্তির জবাব, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পারমিতা। বাবা কামদেব ভট্টাচার্য মনে করছেন, মেয়ের এত বড় সাফল্যের পেছনে রয়েছে অদম্য জেদ। আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামার জন্য প্রশিক্ষকের নির্দেশ মতো ভোর চারটে থেকে উঠে ট্রেনিং করতেন পারমিতা। পড়াশোনার ফাঁকেই সারাদিনে চার-পাঁচ ঘন্টা ট্রেনিংয়ের জন্য বের করে নিতেন।
প্রশিক্ষক কৌশভ সান্যাল এ বিষয়ে জানিয়েছেন, পারমিতার সাথেই রাশিয়ায় খেলতে যাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন তাঁর আরও তিন ছাত্রী। রিমা সাউ, অমৃতা মিশ্র ও সঞ্চারী ভট্টাচার্য। কিন্তু আর্থিক সমস্যার জন্য পিছিয়ে আসতে হয় তাদের। পারমিতার বাবা ও মায়ের একান্ত ইচ্ছাতেই প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কট সত্ত্বেও টাকা জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা। তিনি আরও জানিয়েছেন, পারমিতা খুব কৃতি খেলোয়াড়। গ্রাম বাংলা থেকে ক্যারাটেতে আরও কৃতি খেলোয়াড়ের উঠে আসার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে আর্থিক সমস্যার জন্য সবাই পিছিয়ে যান। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা সরকারি সাহায্য পাওয়া গেলে ফল আরও ভালো হবে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত তাফিসা ওয়ার্ল্ড মার্শাল আর্ট গেম অ্যান্ড ফেস্টিভালে অংশগ্রহণ করেন পারমিতা। সাব জুনিয়র গ্রুপে প্রায় একডজন বিদেশী খেলোয়াড়কে হারিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে ভারতকে সোনা এনে দেন এই খেলোয়াড়। ফাইনাল রাউন্ডে ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে সোনার পদক ছিনিয়ে আনেন পারমিতা। আগামী একুশ সেপ্টেম্বর বোলপুরে পা রাখছে এই কৃতী খেলোয়াড়। সোনার মেয়েকে সংবর্ধনা জানাতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন স্কুল শিক্ষিকা থেকে একাধিক সামাজিক সংগঠন। প্রশিক্ষক কৌশভ সান্যাল বলছেন, রাশিয়া থেকে ফেরার পর আরও বড় মঞ্চে ওকে খেলানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। অলিম্পিক বা তার সমতুল্য মঞ্চ থেকে সোনা জিতে নেওয়াই এখন প্রধান লক্ষ্য। এর জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম নিতে হবে ওকে।