এপার বাংলার মানুষকে মৃত্যুর মুখ থেকে উদ্ধার করল ওপার বাংলা

বঙ্গোপসাগরের মধ্যে টানা দিন কেবল একটি মাত্র বাঁশকে অবলম্বন করে কোনও খাদ্য বা পানীয় অথবা লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই মৃত্যুর সাথে লড়াই চালিয়ে যান কাকদ্বীপের রবীন্দ্রনাথ দাস। প্রবল ঝড়ে জলে ভাসতে ভাসতে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তিনি যখন মৃতপ্রায়, সেই অবস্থায় চট্টগ্রাম উপকূলের একটি বাংলাদেশী জাহাজ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁকে, প্রতিবেশী দেশের আশ্রয়ে প্রান ফিরে পান রবীন্দ্রনাথ।

ঘটনাটি ঘটে জুলাই।  মৎসজীবিদের একটি ট্রলারকে বঙ্গোপসাগরে একটি ভয়াবহ ঝড়ের সম্মুখীন হতে হয় এবং সেই ঝড় বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হওয়ায় তাঁরাও সেদিকে ভেসে চলে যান। অবশেষে সেখানে গিয়ে ঝড়ের গতি কিছুটা প্রশমিত হয়। জেলেদের ঐ ১৫ জনের দলের মধ্যে ১২ জন জলে ঝাঁপ দেন আর বাকি জন আলাদা হয়ে যান

দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার কাকদ্বীপের নারায়ণপুরের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দাস ট্রলার FB Nayan-I -এর প্রধান ছিলেন। জুলাই ১৪ জন জেলে সহ গভীর সমুদ্রের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। প্রবল ঝড়ের মুখে জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জাহাজের ৩ জন বাসিন্দা সেখানে আটকে পড়েন। রবীন্দ্রনাথ  ও বাকি ১১ জন প্রাণ রক্ষার তাগিদে জলে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হন। জ্বালানীর ড্রামগুলোকে বাঁশ ও দড়ির সাথে একত্রিত করে জলে মৃত্যুর বিরুদ্ধে ভেসে থাকার মরিয়া প্রয়াস তাঁরা চালিয়ে যান। পরবর্তী কিছু দিনের মধ্যে তাঁর ১১ জন সহকর্মীকে একে একে  সমুদ্রে তলিয়ে যেতে দেখেও মনোবল অটুট রাখেন এবং এরকম মারাত্মক পরিস্থিতিতে সারভাইভ’ করে যান তিনি।

পাঁচ দিনের মাথায়, ১০ জুলাই চট্টগ্রামের কাছাকাছি এসে তিনি একটি বাংলাদেশী জাহাজ দেখতে পান। নাগাড়ে দুই ঘন্টা প্রচেষ্টার পর অবশেষে রবীন্দ্রনাথ জাহাজটির নজরে আসেন। প্রথমবারের প্রচেষ্টায় বিফল হলেও দ্বিতীয় বারে জাহাজটি তাকে খুঁজে পান এবং তৎক্ষণাৎ রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধার করেন তাঁরা।

"আমি এখন যতটুকু মনে করতে পারছি, আমাদের ট্রলারটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা জলে ভাসছিলাম। সেই সময় আমি কিছুই খেতে পারিনি। আমাদের চারপাশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছিল আর ঢেউয়ের তরঙ্গগুলো ছিলো বৃহৎ। বৃষ্টি হওয়ার ফলে আমি কিছুটা জল খেতে পেরেছিলাম।" - কলকাতা ফেরার এক দিন পর এ কথাগুলোই একনাগাড়ে বলে চলেন রবীন্দ্রনাথ

কিন্তু তার অলৌকিক ভাবে বেঁচে ফেরার আনন্দের সুখের মধ্যেও বিষাদ ঢুকে পড়েছে ইতিমধ্যেই। কারণ তাঁর ভাইপো সমীরের মৃত্যু সংবাদ বয়ে আনতে হয়েছে তাঁকেই। বাংলাদেশী জাহাজটি রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধার করবার ২ ঘন্টা আগেই প্রাণ হারান সমীর।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর অকাল প্রয়াত ভাইপো’র প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, "আমরা একসাথে জলের মধ্যে ভাসছিলাম। ওর একটা লাইফ জ্যাকেটও ছিল। কিন্তু খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই আমি ওকে আমার কাঁধে নিয়েই ভাসছিলাম। কিন্তু উদ্ধারকার্যের আগেই মারা যায় সে।"

বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...