‘কিং’ স্টোকস

দেশের মাটিতে - পিছিয়ে, দলের মনোবল তলানিতে, আর সেখান থেকে রাজার মত উঠে এসে দাঁড়িয়ে থেকে দেশকে জেতানো, এরকম ক্রিকেটার হয়ত বহু তপস্যার পর পাওয়া যায়। ইংল্যান্ড এর অলরাউন্ডার বেন স্টোকস, লিডসের পিচে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে ইংল্যান্ডকে শুধু সমতায় ফেরালেন না বা রেকর্ড গড়লেন না, তিনি বুঝিয়ে দিলেন কেন তাকেই বর্তমান যুগের সেরা অলরাউন্ডার বলা হয়।

হেডিংলিতে কঠিন পিচে অ্যাসেজ এর তৃতীয় টেস্ট- প্রথমে ব্যাট করে জোফ্রা আর্চার (-৪৫) এর আগুনে পেসে মাত্র ১৭৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া তবে অসিদের হয়ে লড়ে গিয়েছিলেন মার্নাস লাবুশানে (৭৪) এছাড়া ভালো খেলেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার (৬১)-ও। কার্যত একা লড়াই করে যেন তিনি স্টিভ স্মিথের যোগ্য বদলি হিসেবেই খেললেন।

কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে একেবারে বেসামাল অবস্থা ইংল্যান্ড এর একমাত্র জো ডেনলি (১২) ছাড়া আর কেউ দু অঙ্কের রান করতে পারেননি। মাত্র ৬৭ রানে ধূলিসাৎ হয়ে যায় ইংল্যান্ড এর ইনিংস। উইকেট নিয়ে অসি পেসার জস হেজলউড (-৩০) ইংল্যান্ডের ব্যাটিং এর কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন।

একেবারে চালকের আসনে থাকা অবস্থায় তৃতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া খুব বেশি রান তুলতে পারেনি। আবারও রক্ষাকর্তার দায়িত্বে ছিলেন মার্নাস লাবুশানে (৮০) তার সাথে যোগ্য সঙ্গ দেন ট্রাভিস হেড (৩৩) ২৪৬ রানেই অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।

৩৫৯ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ইংল্যান্ড মাঠে নামতেই আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ১৫/ হওয়ার একপ্রকার ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে এই টেস্টেও ইংল্যান্ড-এর পরাজয় নিশ্চিত। কিন্তু জো ডেনলি (৫০) জো রুট (৭৭) এর অধিনায়কোচিত ইনিংসে ইংল্যান্ড ফের লড়াইয়ে ফেরে। কিন্তু রুট আউট হওয়ার পর আবারও মুশকিলে পড়ে তারা। একদিকে যখন পরপর উইকেট পড়ছে, তখন একাহাতে লড়ে যাচ্ছিলেন বেন স্টোকস। যখন উইকেট পড়ল, তখন দরকার ছিল ৭৩ রানের। আর সেইসময় স্টোকস শুরু করলেন নিজের বিধ্বংশী ব্যাটিং। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচকে সঙ্গে নিয়ে স্টোকস ৭৬ রানের দুর্ধর্ষ পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন, যেখানে লিচ একটিও রান করেননি। শেষের দিকে অসি স্পিনার নাথান লিয়ঁ এর রান আউট মিস তার পরের বলে নিশ্চিত এলবিডব্লু না দেওয়া যেন কিছুটা ভাগ্যের কাজ করেছে ইংল্যান্ডের হয়ে কিন্তু যে বলে, ভাগ্য সর্বদা সাহসীর পক্ষেই যায়। শেষ পর্যন্ত ১৩৫ রানের অমানবিক ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন বেন স্টোকস। 

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট এবং রান তাড়া করতে নেমে দুর্ধর্ষ শতরান, স্বভাবত কারণেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন বেন স্টোকস। আর এরকম জমজমাট টেস্ট ক্রিকেট দেখে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত ইংল্যান্ডের সমর্থকরা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...