বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে প্রয়াত বেলুড় মঠের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ, বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর

প্রয়াত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের শ্রীমৎ অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দজি মহারাজ। মঙ্গলবার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে ৮টা ১৪ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। জানা গিয়েছে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ২৯ জানুয়ারি থেকে তিনি এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষোড়শ অধ্যক্ষ ছিলেন স্বামী স্মরণানন্দ। স্বামী আত্মস্থানন্দের জীবনাবসানের পরে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেন তিনি।

জানা গিয়েছে যে তাঁকে গত ২৯ জানুয়ারি মুত্রনালিতে সংক্রমণের কারণে তাঁকে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেই হাসপাতালের সাত তলার ৫০ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। ধীরে ধীরে সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত হন স্বামী স্বরণানন্দ। এছাড়া শ্বাসকষ্ট দেখা যাচ্ছিল। এরপর ৩ মার্চ হঠাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ফলে, ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তাঁকে। গত ১৩ মার্চ একটি ছোট অস্ত্রপচার করে শ্বাসকার্যের জন্য একটি নল ঢোকানো হয় তাঁর শ্বাসনালিতে। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন যে কিডনিতেও সমস্যা হয়েছিল তাঁর।

আরও জানা গিয়েছে যে সেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সাথে দেখা করে গিয়েছিলেন।

এর আগে, অর্থাৎ, ২০২২ সালের মার্চ মাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রামকৃষ্ণ মঠের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ। সেইসময় তাঁকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন এবং আবারও আগের মতোই কাজকর্ম করছিলেন তিনি।  

কিন্তু চলতি বছরে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন মহারাজ। আর এবার তিনি সকলকে ছেড়েই চিরকালের জন্য চলে গেলেন।

১৯২৯ সালে তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর জেলার আন্দামি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন স্বামী স্মরণানন্দ। খুব কম বয়সে মাকে হারান। এরপর ১৯৪৬ সালে স্কুলের পাঠ শেষ করে নাসিকে বাণিজ্য বিভাগে ডিপ্লোমা করেন এবং ১৯৪৯ সালে মুম্বই পাড়ি দেন তিনি। সেখানে শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুম্বই রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। ১৯৫২ সালে, মাত্র ২২ বছর বয়সে স্বামী শঙ্করানন্দের কাছে মন্ত্রদীক্ষা নেন এবং ১৯৫৬ সালে ব্রহ্মচর্য নেন তিনি। 

এরপর ১৯৫৮-তে ‘অদ্বৈত আশ্রম’-এর কলকাতা শাখায় আসেন তিনি। সেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি বিবেকানন্দ প্রবর্তিত ইংরেজি পত্রিকা ‘প্রবুদ্ধ ভারত’-এর প্রবন্ধক সম্পাদকের কয়েক বছর দায়িত্ব সামলেছেন। প্রায় ১৫ বছর ‘রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ’-এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৩ সালে রামকৃষ্ণ মিশনের গভর্নিং বডির সদস্য হন এবং এরপর ১৯৯১ সালে চেন্নাই রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন শ্রীমৎ স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজ।

তাঁর প্রয়াণ শোকস্তব্ধ সকল ভক্তরা।

খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকপ্রকাশ করেছেন বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন যে বেলুড় মঠের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজের প্রয়াণে তিনি গভীরভাবে শোকাহত। নিজের দীর্ঘ জীবনকালে স্মরণানন্দজি মহারাজ রামকৃষ্ণ চেতনার মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে আধ্যাত্মিকতার পথ দেখিয়েছেন। আজও তিনি বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও অনুগামীদের অনুপ্রেরণা। তিনি তাঁর অনুগামী এবং ভক্তদের প্রতি সমবেদনা জানালেন।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি লেখেন যে শ্রীমৎ স্বামী স্মরণানন্দ জি মহারাজ, রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের শ্রদ্ধেয় সভাপতি আধ্যাত্মিকতা এবং সেবায় তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। অগণিত হৃদয় ও মননে অমলিন ছাপ রেখে গেছেন। তাঁর সহানুভূতি ও প্রজ্ঞা প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। কয়েক বছর ধরে তাঁর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মোদির। তিনি ২০২০ সালে বেলুড় মঠে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে কলকাতায় তিনি হাসপাতালে গিয়ে তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছিলেন। ওম শান্তি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...