রঙ্গিন দুনিয়া হতে সাবধান

সোনারপুর উদ্দালক প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক "নষ্ট তারার গল্প " সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল  মধুসূদন মঞ্চে।রঙ্গিন দুনিয়া আমাদের সবাইকেই প্রলোভিত করে । কারন সেই দুনিয়াটা আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে , আমাদের অদ্ভুদ এক ফ্যান্টাসি কাজ করে আমাদের এই দুনিয়া নিয়ে । হাজারো হাজারো মেয়ে গ্রাম থেকে শহরে আসছে রঙ্গিন দুনিয়া সিনেমা এবং টেলিভিশনের হাতছানিতে । অতি সহজেই সাফল্য পাওয়ার বাসনায়  সম্মুখীন হচ্ছে নারীলোভী অসাধু চক্রে-ব্যবহৃত হতে হতে একটা সময় মেয়েটিকে হয়তো নোংরা কোনো পেশায় নাম লেখাতে হচ্ছে অথবা নিজের স্বপ্নকে ছুঁতে না পেরে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যা -কখনও বা মেয়েটি অসাধু চক্রের লালসার শিকার হওয়ার পর বেওয়ারিশ লাশ হয়ে যাচ্ছে । আর এই অসাধু চক্রের সঙ্গে যুক্ত তথাকথিত অনেক শিল্পী -নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এবং নিজের সাফল্যর সিড়ি হিসাবে ব্যবহার করে এই গ্রাম থেকে আসা দুচোখে স্বপ্ন ভরা মেয়ে গুলোকে । "তারা" হতে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেলো, না যে "তারা"  নষ্ট জয়ে গেছে? নাটকটি এই প্রশ্ন রাখে। থিয়েটার কে ভালোবেসে এখন আর কেউ গ্রুপ থিয়েটারে আসছে না। সবাই আসছে চট-জলদী অভিনয়টা শিখে সিরিয়াল বা সিনেমায় নিজের মুখ দেখতে। রাতারাতি সেলিব্রেটি হতে। তৈরী হয়েছে দালাল চক্র। যারা মরীচিকার মায়া তৈরী করে টাকা হাতাচ্ছে। লুঠ হয়ে যাচ্ছে যৌবন, ইজ্জত।সম্প্রতি সরকারি একটি নাট্য ওয়ার্কশপ ক্যাম্পে এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের সকলেরই জানা।
নাটকটির সংক্ষেপিত কাহিনী এরকম -
মানবেন্দ্র (জয়েশ ল)কলকাতায় আসে তার "তারা" হতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া বোনের খোঁজে। হাজির হয় মহানায়ক সম্পদের(পার্থ গোস্বামী) ফ্ল্যাটে। নাটকের শুরু এখন থেকে।  সম্পদ কেন শংকিত? মানবেন্দ্র কি খুঁজে পেলো তার হারিয়ে যাওয়া বোনকে? তার উত্তর দিয়ে দিলে নাটকটি দেখার ইচ্ছেটা চলে যাবে । সেটার জন্য নাটকটি দেখতে হবে । এই অতি পরিচিত কাহিনীকে নাট্যরূপ দিয়ে  নাটকটিকে সুচারুভাবে নির্দেশনা করেছেন  পার্থ গোস্বামী। নির্দেশনার পাশাপাশি সম্পদের চরিত্রে তার অভিনয় নাটকটিকে এক অন্য মাত্রা দেয় । একজন প্রতীশোধ স্পৃহা দাদার চরিত্রে জয়েশ ল এর মন কাড়া অভিনয় দর্শকের মন ছুঁয়ে যায় - বিশেষ করে টবের  চারাগাছটি নিয়ে তার শেষ দৃশ্যটি ।সম্পদের সহকারী সন্তুর চরিত্রে শম্ভু মন্ডলের অভিনয় নজর কাড়ে ।এই নাটকের আরেকটি বড় সম্পদ এর আবহ। সেটিরও দায়িত্ব সামলেছেন নির্দেশক নিজেই । বাবলু সরকারের আলো , কল্যান সরকারের শব্দ প্রক্ষপন,মঞ্জুলা গোস্বামীর শিল্প নির্দেশনা নাটকটির পূর্নতা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করে।

color-world-content

যে রুপালি পর্দা এবং টেলিভিশনের মরীচিকা গ্রুপ থিয়েটারের কর্মীদের হাত ছানি দিয়ে ডাকে, তাকে হয়তো এই নাটক প্রতিহত করতে পারবো না কারণ ভোগবাদ সেটা তাদের মননে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই নাটক  যেটা পারে সেটা হল নাটকের মাধ্যমে একটি তন্নিষ্ঠ বার্তা পৌঁছে দিতে সেই অবক্ষয়ের বিরুদ্বে।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...