অজয়ের পাড়ে জমে উঠেছে জয়দেবের মেলা

সংক্রান্তির হাত ধরেরই শীতের বিদায় হয় বাংলা থেকে। তবুও শেষ বেলায় কুয়াশার চাদরে মোড়া অজয় পাড়। যদিও শহর কলকাতার থেকে এখানে ঠান্ডার প্রকোপ অনেকটাই কম। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। তাপমাত্রা ৭-৮ ডিগ্রির মাঝামাঝি। পায়ে পায়ে সাতসকালেই হাজির হাজারো বাউল-ফকিরের দল। গায়ে কাঁটা দেওয়া ঠান্ডাও এদিন ফিকে হয়ে গিয়েছে তাদের উদাত্ত কণ্ঠে গাওয়া জীবনে জয়গানের কাছে। দেশজোড়া অস্থিরতার আঁচ পড়েছে অজয় পাড়ে বসা জয়দেব মেলাতেও। বাউলের গানে আহ্বান, ‘সবাই থাকো না মিলেমিশে, এত বিভেদ কেন মানুষ মানুষে।’ এক নতুন দিন দেখেছে অজয়ের পাড়।

মানবতার গানে গলা মেলাতে হাজির হয়েছেন সব ধর্ম, সব বর্ণের মানুষ। তাই তো পাড়ে বসা জয়দেব মেলা এবার আরও জোরালো আওয়াজ তুলেছে, সারা পৃথিবীতে একটাই জাতি। একটাই ধর্ম। তা মানব ধর্ম।বুধবার সূচনা হয় মেলার চলবে প্রায় সপ্তাহ ব্যপি। মেলায় ভিড় জমাতে শুরু করেছেন বাউল ফকিরের দল। দর্শণার্থীরা। আখড়ায় আখড়ায় চলছে গান-বাজনা। বদেশে থেকে এসেছএ গানের দল। তারাও পরেছে বাংলার বাউলের পোষাক। মকর সংক্রান্তির দিন অজয় নদীতে স্নানে শামিল হন লক্ষ মানুষ। দর্শনার্থীদের ভিড় হয় রাধাবিনোদের মন্দিরেও। বাউলের আখড়া জমে উঠেছে গানে গানে। ধ্বনিত হচ্ছে প্রতিবাদের গান। মিলনের গান। যেমন শিল্পী সাধন দাস বৈরাগ্যের গলায় শোনা গেছে, ‘এত বিভেদ কেন মানুষে মানুষে! কে হিন্দু আর কে মুসলমান, কেউবা জৈন, কেউবা খ্রিস্টান, সবাই থাকো না মিলেমিশে, ও মানুষ ভাই, এত বিভেদ কেন মানুষে মানুষে।’

এলাকার বাসিন্দা কবি জয়দেবের গুণমুগ্ধ সংস্কৃতিপ্রেমী আনারুল হক যেমন জানিয়েছেন, ‘এই মেলা মানুষের। এই মেলা মানবতার। এই মেলা সম্প্রীতির। মানুষে মানুষে ভেদ নয়, বরং বন্ধন অটুট রাখার বার্তাই মেলে মেলা থেকে।’বীরভূম ও বর্ধমান জেলার মাঝবরাবর বয়ে যাওয়া অজয় নদের ধারে কেন্দুবিল্ব গ্রামে জন্ম লক্ষণ সেনের সভাকবি জয়দেবের। ‘গীতগোবিন্দ’র রচয়িতা জয়দেব যিনি পরিচিত সংস্কৃত সাহিত্যের শেষ বড় মৌলিক কবিরূপে। কথিত আছে,  মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গায় স্নান করতে কবি প্রতিবছর যেতেন কাটোয়ায়। একবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাটোয়া যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি মুষড়ে পড়েন। রাতে স্বপ্ন দেখেন তাঁর জন্য গঙ্গা উজান বেয়ে এসে মিলেছে অজয়ে। মনে করা হয়, সেই থেকেই অজয় নদে মকর স্নান ও মেলার সূচনা। যা আজও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মানব ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান।

মেলা উপলক্ষে ২৫০টি বাউল, ফকির, কীর্তনীয়াদের আখড়া বসেছে। রয়েছে ৫৫০টি স্টল। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিং জানান, ‘মেলার নিরাপত্তার জন্য ২৫০০ পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়েগ করা হয়েছে। বড় সংখ্যায় সিসি টিভি বসানো হয়েছে। মেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...