গলব্লাডারে স্টোন সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশি অবগত।গলব্লাডার হল লিভারের পিছনদিকে অবস্থিত থলিসদৃশ অঙ্গ যার মধ্যে লিভার থেকে নিঃসৃত হওয়া পিত্ত এসে জমা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এই পিত্তরস গলব্লাডারে সলিড পার্টিকল সৃষ্টি করে থাকে। একেই বলা হয় গলস্টোন। পিত্তরস কোলেস্টেরল বা বিলিরুবিনের পরিমান বেড়ে গেলে এই স্টোন তৈরী হওয়ার সমস্যা তৈরী হতে পারে। পিত্তরসের অন্য নানাধরণের সাবস্টেন্স এই স্টোন তৈরির পদ্ধতিকে আরও ত্বরান্বিত করে থাকে। এই সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হয় বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে। এছাড়াও যাদের ওজন বেশি, যারা হঠাৎ ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, যারা বার্থ কন্ট্রোল পিল নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো পেটে ব্যথা। কিন্তু পেট ব্যথা নানাকারণেই হতে পারে। তাই পেট ব্যথার সাথে যদি জ্বর, অত্যধিক ঘাম, হঠাৎ ঠান্ডা লাগা, বমিভাব প্রভৃতি হতে শুরু করে তাহলে ধরে নিতে পারেন বিশেষ কোনো সমস্যা হচ্ছে। গলব্লাডারে স্টোনের অন্যতম হল জন্ডিস। এর সাথে সাথেই সারা গায়ে ব্যথা পরিলক্ষিত হয় যা ওভার দা কাউন্টার মেডিসিনেও কমে না। এই ব্যথা বিশেষভাবে অনুভূত হয় পেটের ডানদিকের উপরের দিকে কারণ এই জায়গাটিতে লিভারের পিছনদিকে অবস্থান করে গলব্লাডার। গলব্লাডারের সমস্যার কারণে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তাই এইসব লক্ষণ যদি দেখেন তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গলস্টোন যদি গলব্লাডারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে বিশেষ কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু স্টোনের আকার যদি বড় হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে ফ্যাটযুক্ত খাবার খেলে পেটে ব্যথা করতে পারে। তাছাড়া জীবনযাত্রায় কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু এই স্টোন যদি কোনো ডাক্ট-এর মাঝে এসে যায় এবং সেই ডাক্টের মধ্যে অবস্ট্রাক্শন সৃষ্টি করে সেই ক্ষেত্রে অন্য নানাধরণের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। পিত্তনালী আটকে যাওয়ার ফলে পাচকরস সেই নালীর মধ্যেই আটকে থেকে যায়। এর ফলে পেটে ব্যথা থেকে শুরু করে নানা ধরণের সমস্যা শুরু হয়। বেশিদিন ধরে এই সমস্যা চলতে থাকলে অর্গ্যান ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে। এই রোগের সঠিক চিকিৎসা না হলে এই রোগের ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কিন্তু বাড়িতে থেকে কিভাবে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়বেন চলুন আজ জেনে নিন...............
১) গলব্লাডারকে রেস্ট দেওয়ার জন্য কয়েকদিন শুধু ক্লিয়ার লিকুইডের উপর নির্ভর করুন। সলিড খাবার খেলে সমস্যা হতে পারে।
২) অতিরিক্ত তেলমশলাযুক্ত খাবার এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব পরিত্যাগ করুন। ফ্যাটজাতীয় খাবার এইসময় লিভারে প্রদাহ অর্থাৎ ইনফ্লেমেশন সৃষ্টি করতে পারে।
৩) ব্যথার জন্য অ্যাসিটোমিনোফেনজাতীয় ওষুধ খেতে পারেন কিন্তু তাও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই যেকোনো ওষুধ খাওয়া ভালো।
এই রোগের লক্ষণ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই রোগের হওয়ার সময় হঠাৎ পেটে ব্যথা শুরু হয়ে ধীরে ধীরে সেই ব্যথা উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সেই ব্যথা চেস্টে গিয়ে শেষ হয়। একধরণের মোচড় দেওয়া ব্যথা এই সময় অনুভূত হয়ে থাকে। তাই কখনো যদি অনুভব করেন যে পেটের ব্যথা বেশি বাড়াবাড়ি রকমের হচ্ছে তখন সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের কাছে যান।