ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা যেমন নেই বললেই চলে। তার কারন মূলত সঠিক সময়ে চিঠি হাতে না পাওয়া। স্পিড পোস্ট যদিও অফিসিয়াল কাজকর্মের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু তাও মাঝে মাঝেই তার বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। ডাকবাক্স কেবলমাত্র এখন স্মৃতির সরণি বেয়েই আসে আমাদের চেতনে।
ইন্টারনেটের যুগে কার্যত অচল হয়ে যাওয়া ডাকবাক্সের গুরুত্ব ফিরিয়ে আনতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ডাক বাক্সে লাগানো হচ্ছে বার কোড। ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জেলার মুখ্য ডাকঘর এবং সাব পোস্ট অফিসের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডাকবাক্স রাখা রয়েছে। কয়েক দশক আগে সেগুলিই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু মাঝপথে চিঠি হারিয়ে যাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে চিঠি পৌঁছনো, দীর্ঘদিন পোস্টবক্স না খোলা মাঝপথে চিঠি নষ্ট করে দেওয়া-এমন প্রচুর অভিযোগ প্রায়ই সামনে আসত। সেই জন্যই কোনও গুরুত্বপূর্ণ চিঠি হলে মানুষ রেজিস্ট্রি পোস্ট বা স্পিড পোস্ট করার ব্যবস্থা করত।
তারপর বিগত দশকে ইন্টারনেটের রমরমা বেড়ে যাওয়ায় চিঠি লেখা একটি অতীতের শিল্প হয়েই রয়ে গেছে। মানুষের হাতে সময় কমে এসেছে, তাই এখন আর সেই আগের মতো কাব্যিকভাবে চিঠি লেখার ফুরসত নেই। তবে প্রয়োজনীয় চিঠি পাঠানোর দরকার যেমন আগেও ছিল, তেমনি এখনও আছে। সেই সব চিঠি যাতে ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠানো যায়, তা সুনিশ্চিত করতেই নতুন করে গোছানো হচ্ছে ডাক বিভাগকে। লাগানো হচ্ছে বার কোড। হেড পোস্ট অফিস এবং সাব পোস্ট অফিসের প্রতিটি ডাক বাক্সে বার কোড লাগানো হচ্ছে। পোস্টম্যানদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে একটি অ্যাপ রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ওই ডাকবাক্স ক্লিয়ার করতে গেলেই পোস্টম্যানদের অ্যাপ খুলে বার কোড স্ক্যান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কতগুলি চিঠি ডাকবাক্স থেকে বের করা হচ্ছে, তা হিসেবে করে অ্যাপে আপলোড করতে হবে। নতুন এই ব্যবস্থায় ডাকবাক্সগুলি কোথায় কোথায় রয়েছে, তা ট্র্যাক করা সম্ভব হচ্ছে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সেই বাক্সগুলো খোলা হচ্ছে কি না, কতগুলো চিঠি জমা হচ্ছে, কোনও ডাকবাক্সে বেশি চিঠি পড়লে প্রয়োজন বুঝে সেখানে অতিরিক্ত ডাকবাক্স দেওয়া যাবে। আবার কোনও ডাকবাক্সে একদম চিঠি না এলে সেটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বারাসাত ডিভিশনের ৭৬টি ডাকবাক্সে ইতিমধ্যেই বার কোড লাগানো হয়ে গেছে। সেখান থেকে বার কোড স্ক্যান করে পোস্টম্যানরা তথ্যও পাঠানো শুরু করে দিয়েছে।