আজ টিফিনে কী আছে?
বাক্স খুলেই দ্যাখ না!
তাড়াতাড়ি বাক্স খুলতেই হাসিতে ভরে গেল মুখ! কান্নাকাটি বন্ধ!
ঘুমচোখে ইস্কুল যাওয়ার নারাজ ইচ্ছেটা মুহূর্তে বদলে যেত টিফিন কৌটোর মধ্যে সবুজ কাগজে মোড়া বস্তুটা দেখে। কাউকে বলতে হত না কাগজে মোড়া কী আছে!
সবুজ মচমচে হালকা কাগজে মোড়া চার চৌকো এক কেক। আঙ্গুলের আলগা চাপে ঝুরঝুরিয়ে ঝরে পড়ে। মাঝে মাঝে বাদাম আর মোরব্বা। ভাগ্য ভাল থাকলে কিশমিশও মিলতে পারে একটা-দুটো। বছরের পর বছর ধরে এই কেকের প্রেমে পড়ে আছে বাঙালি। ক্লাসরুম বদলেছে। ইস্কুল ছেড়ে কলেজ, কলেজ থেকে চাকরি তবু এক থেকে গিয়েছে বাপুজী কেক! প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাঙালির ইমোশন। তার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
রেলস্টেশন থেকে শুরু করে পাড়ার চায়ের গুমটি, স্কুলের ক্যান্টিন থেকে হাসপাতালের গেটে- এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে বাপুজী’র খোঁজ পাওয়া যায় না। কিন্তু কীভাবে হয়ে উঠল বাপুজী বাঙালির আবেগ?
সেই গল্প জানতে হলে ফিরে যেতে হবে সত্তরের দশকে।
হাওড়ার পল্লবপুকুর বাপুজীর আঁতুড়ঘর। সেখানই প্রথম গড়ে ওঠে ‘বাপুজীর ইউনিট। ১৯৭৩ সালে হাওড়া নিবাসী আলোকেশ জানা প্রথম ‘নিউ হওড়া বেকারি প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে বেকারি সংস্থার রেজিস্ট্রেশন করেন। তারপর কলকাতার লেকটাউন আর হুগলির শ্রীরামপুরে ছড়িয়ে পড়ে শাখা।
বাপুজী টিফিন কেক। ভ্যানিলার গন্ধে মিশে থাকে ফ্রুট কেকের সুবাস। সময় বদলেছে, কেকের দাম বদল হয়েছে কিন্তু স্বাদ থেকে গিয়েছে একই। দাম আর স্বাদ এই দুই বাপুজীর অস্ত্র। তার জোরেই বাপুজী হয়ে ওঠে বাঙালির নিত্যসঙ্গী।
পরিসংখ্যান বলছে এখন প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি বাপুজী কেকের দৈনিক বিক্রি। কেকের মরসুম পড়লে তা আরও খানিকটা বাড়ে।
করোনা-অতিমারী কাটিয়ে এসেছে বাপুজী। দুর্যোগ থামলে আবার সকালের চায়ের সঙ্গে পুরনো ছন্দে। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে গিয়ে বাড়াতে হয়েছে কেকের দামও। সেখানেও অভিনব ভাবনার স্বাদ পেয়েছেন কেকে-রসিকরা। রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয় ‘আপনাদের বাপুজী এখন ৭ টাকা’। হাওড়ার জানা পরিবারের হাতেই বাপুজীর রাজপাট।
চকচকে রঙিন কেকের ভিড়ে বাপুজীর আবেদন অনাবিল। এতগুলো বছরে কোনও বদল ঘটেনি তার। সেই একই সবুজ কাগজের মোড়কে। বহু মানুষের কাছে বাপুজী ছোটবেলার স্বাদ। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যান না কেন, খুঁজে বেড়ান সেই স্বাদ।