কথায় বলে ‘বিপদের নাম বাঁশ’। দৈনন্দিন জীবন ‘বাঁশ’ শব্দটা বেশ দুশ্চিন্তার বটে। কিন্তু বাঁশ আদতে খেতে খারাপ নয়। বাঁশ বেশ বহুল প্রচলিত পদ।
চলতি কথায় বলে বাঁশের কোড়। পুরো নাম বাঁশের কোড়ল। গ্রামের হেঁশেলে দারুণ জনপ্রিয় এক ঘরোয়া পদ। শুনে মনে হতেই পারে, এ বাবা বাঁশ বার খায় নাকি! কিন্তু বাঁশের আচার বা কচি বাঁশের তরকারি, চচ্চড়ি যারা তার স্বাদ জানে চেটেপুটে খায়।
তবে ইচ্ছে হল আর রেঁধে ফেললাম, বাঁশের কোড়ের ক্ষেত্রে একথা খাটে না। সব ঋতুতে খাওয়াও যায় না। বর্ষার জল নেমে গেলে নরম মাটিতে জন্মায় বাঁশের কোড়। অনেকেই মাটিতে বাঁশের কোড় গজাতে শুরু করলে মাটির হাঁড়ি চাপা দিয়ে আসে। সেই মাটিতে সর্পিল আকারে বাড়তে থাকে বাঁশের কান্ড। নির্দিষ্ট সময় পর কোড় কেটে এনে হাঁড়ি ভেঙে ফেলা হয়। তার ভিতর থাকে বাঁশের কান্ড। সেই অংশই খাওয়া হয় রান্না করে। তবে হাঁড়ি ছাড়াও রান্না করা যায়।
এপার বাংলা-ওপার বাংলা, উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চল, অসম, ত্রিপুরায় বাঁশের কোড় খুব প্রিয় এক পদ। স্থানীয় বাসিন্দা তো বটেই এইসব অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যেও। এমনকি চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডেও বিভিন্ন রেসিপিতে ‘বাঁশ’ মানে ‘ব্যাম্বু স্যুট’ ব্যবহার করা হয়। মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, বাজ্জে বাঁশের কোড়ল সব থেকে সুস্বাদু।
বাঁশের কোড়ল রান্না করতে গেলে উপরের শক্ত সবুজ অংশ ফেলে দিতে হবে। ভিতরের নরম সাদা অংশের আঁশ ছাড়িয়ে নিতে হবে। অনেক জায়গায় একেবারে কেটে-ছাড়িয়ে বিক্রি করা হয়। সে ক্ষেত্রে দাম একটু বেশি পড়ে।
ছোট ছোট করে কেটে, জলে ভালো করে দুয়ে আগে সেদ্ধ করে রাখার নিয়ম। অঞ্চল ভেদে কোড়লের পদ এক একরকম। নিরামিষ থেকে আমিষ সব ধরনের।
বাঁশ কোড়লে শুটকি
কী কী লাগে
শুটকি মাছ
কোড়ল,
রসুন বাটা
লঙ্কা ও হলুদ বাটা
পেঁয়াজ কুচি
সরষের তেল
নুন
কীভাবে রাঁধবেন?
সেদ্ধ করে বাঁশ কোড়ল একেবারে ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। তারপর পাত্রে তেল গরম করে শুঁটকি মাছ আর পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে। কিছুক্ষণ ভাজার পর বাঁশ কোড়ল দিয়ে নেড়ে রসুন বাটা, নুন, হলুদ আর লাল লঙ্কা বাটা দিন। ভালো করে কষিয়ে সামান্য জল দিয়ে ঢেকে অল্প তাপে বাঁশ কোড়লে শুঁটকি রান্না করতে হবে।
শুটকির জায়গায় চিংড়ি মাছ দিয়েও রান্না করা যায়। চিংড়ি দিয়ে রান্না করলে নামানোর আগে অল্প জিরে গুঁড়ো দিতে পারেন।
এই রান্নায় খুব বেশি মশলার ব্যবহার হয় না।
বাঁশ কোড়ল দিয়ে নোনা ইলিশ
কী কী লাগবে
বাঁশ কোড়
নোনা ইলিশ
পেঁয়াজ-রসুন কুচি
কাঁচা লঙ্কা
হলুদ বাটা
লঙ্কা বাটা
নুন
কীভাবে রাঁধবেন
বাঁশের কোড়ল আগে সামান্য নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নেবেন। নোনা ইলিশ গরম জলে ভিজিয়ে রাখবেন। কড়াইতে তেল দিয়ে পেঁয়াজ-রসুন কুচি ভেজে লঙ্কা ও হলুদ বাটা দিন। সঙ্গে কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা। মশলা কষানো হয়ে গেলে সেদ্ধ বাঁশের কোড় আর ইলিশ মাছ দিন। নাড়তে থাকুন। দরকার বুঝলে সামান্য জল দেবেন। ভাঙা ভাঙা হয়ে ভাজা হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এই পদ শুকনো হয়। ভাতের সঙ্গেই সবচেয়ে ভাল লাগে খেতে।