‘বাঁশের কেল্লা’র সঙ্গে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সম্পর্ক বহুদিনের আর সেই সূত্রেই ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ বিষয়টি আমাদের একেবারে অজানা নয়। কিন্তু তা প্রত্যক্ষ করার কোনো সুযোগই আর নেই বা তা দেখতে কেমন ছিল তার বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা নেই, শুধু ইতিহাস ঘেঁটে সেটির একটি অবয়ব আমরা তৈরী করে নিয়েছি। তবে ইতিহাসের সেই অবয়বই এবার কিছুটা হলেও বাস্তব রূপ পেল জন ও সিনথিয়া হার্ডি’র হাত ধরে।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে তাঁরা এমন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন যা সমগ্র বিশ্বে ‘গ্রীন স্কুল’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই স্কুল যে পরিবেশ বান্ধব তা নাম থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু হঠাৎ এইধরণের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন, এমন পরিকল্পনার কারণ কি ?
জানা যায় অ্যালেন ওয়াগস্টাফ ‘থ্রি স্প্রিংস’-এর একটি শিক্ষামূলক ডকুমেন্টরি পড়ার পর ২০০৬ সালে হার্ডিং’স এহেন ‘গ্রীন স্কুল’-এর ধারণা পান। আর তখন থেকেই এর পরিকল্পনা ও সূচনা । বেসরকারি এই স্কুলের বিশেষত্ব হলো, ক্যাম্পাসের বাড়িগুলো পুরোটাই তৈরী বাঁশ দিয়ে।
বালির উবুদ গ্রামের খুব কাছে আইয়ুঙ নদী জুড়ে ২২ মিটার বিস্তৃত এই গ্রীন স্কুল। ২০০৬ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও স্কুলটিতে পঠন পাঠন শুরু হয় ২০০৮ সালে। দেখতে দেখতে প্রায় ১১ বছর অতিক্রান্ত এই স্কুলটি বহুবার সংবাদমাধ্যমের শীর্ষস্থান দখল করেছে।
আধুনিক যুগের প্রযুক্তিগত সাফল্যের মাঝে যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণ একটা গভীর বিষয়, সেখানে বাঁশের তৈরী এই স্কুলটি সত্যি অভূতপূর্ব। আর তাই প্রতিষ্ঠাতা হার্ডি-দ্বয় পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সহজলভ্য অথচ শক্তিশালী বাঁশকে কাজে লাগান। প্রায় স্টিলের সমান শক্তিশালী বাঁশ স্টিল থেকে ৬ গুন বেশি হালকা। তাই এর থেকে ভালো উপাদান তার পক্ষে পাওয়া দুষ্কর ছিল।
শুধু পরিবেশগতভাবে নয়, স্থাপত্যের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ এই স্কুল। সমগ্র স্কুলটি ‘Bamboo u’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। যার স্বার্থক রূপ দান করেছেন কার্পেন্টার জর্জ স্ট্যাম ও ডিজাইনার আলদো ল্যান্ডওয়ার। পরিবেশবান্ধব অথচ আধুনিকতার ছোঁয়াও সুস্পষ্ট। এখানে পাঠক্রমও শিক্ষর্থীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে , যাতে পূর্ণাঙ্গ সহযোগী হয়েছে ‘আইবুকু ডিসাইন দল’ , তার সঙ্গে রয়েছে যাতায়াতের জন্য বায়ো বাস ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষামূলকভাবে চাষের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায়। গোটা বিষয়টি এতটাই আকর্ষণীয় যে ২০২০ সালে নিউজিল্যান্ড , ২০২২ এ আমেরিকায় , দঃ আফ্রিকায় এইধরনের স্কুল খোলার কাজ শুরু হয়েছে , যা শিধু শিক্ষার্থীদের নয়, শিক্ষক এমনকি অভিভাকদের কাছেও শিক্ষা ব্যবস্থাকে আকর্ষণীয় করে তুলছে ও তুলবে। ৪০ জনকে নিয়ে যে স্কুল শুরু হয়েছিল আজ তা ১০০০ ছুঁয়েছে , যার আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তি সাফল্যের বার্তাবাহী।