গিয়েছিলেন পর্বত শিখর অভিযানে, ফিরে এলেন হিমালয়ের বুকে মানুষের ফেলে আসা আবর্জনা সাফ করে। নেপথ্যে, বালির সবচেয়ে প্রাচীন অভিযাত্রী সংস্থা ‘বালি ভাগীরথী’। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি গাড়োয়াল হিমালয়ের কেদারনাথ বিপর্যয়ের পর যে তান্ডবলীলা শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত। অভিযান মরশুম শুরু হলেই দেশী বিদেশী অভিযাত্রীরা ভীড় জমাতে থাকেন গিরিশৃঙ্গগুলিকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সকলে পরিবেশ সম্বন্ধে ততটাও সচেতন বোধ হয় থাকেন না। তাই যাত্রাপথের বিবিধ স্থানে ফেলে রেখে যান নিজেদের আবর্জনা।
পর্বত অভিযানে প্রাচীন সংস্থা ‘বালি ভাগীরথী’ সেই দায় নিয়েই অভিযান চালিয়েছেন হিমাচলের পর পাঞ্জাল হিমালয়ের মাউন্ট দেও টিব্বায়। যাত্রাপথে যেখানে যেখানে পড়ে থাকা আবর্জনা ও পর্বতারোহীদের ফেলে যাওয়া বর্জ্য চোখে পড়েছে, সমস্তই সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন মানালি পুরসভার দপ্তরে।
বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্বতোরাহী তাদের এই মহান উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। হাওড়ার বাসিন্দা, এভারেস্ট সহ বিশ্বের বেশ কিছু দুর্গম শৃঙ্গজয়ী মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আমরা যারা পাহাড়ে যাই, তাদের সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে পরিবেশ রক্ষা করার। প্লাস্টিক সহ পর্বতারোহনের সময় যা যা জিনিস নিয়ে যাওয়া হয়, তার প্রত্যেকটি ফিরিয়ে নিয়ে আসাটা আমাদেরই কর্তব্য। আরও বেশি করে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা পাহাড়ে অভিযান করুক, আমি চাইব। কিন্তু প্রত্যেককেই পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এই কাজটা করে যেতে হবে। বালি ভাগীরথী যে কাজটি করেছে তা দৃষ্টান্তমূলক। এ থেকে অন্যদেরও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
সাফাই প্রক্রিয়া যে শুরু হবে, তা আগে থেকেই মানালি মিউনিসিপ্যাল কমিটিকে জানানো ছিল। সেই অনুযায়ী ৩০শে আগস্ট রওনা দেয় এই সংস্থা। সেখানকার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রামলাল ফ্ল্যাগ অফের মাধ্যমে ২রা সেপ্টেম্বর মানালি থেকে যাত্রা শুরু করান। ক্রমে জগৎসুখ, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে সিক্কা, এরপর সিরি হয়ে ৫ তারিখ বেসক্যাম্পে পৌঁছয় এই সংস্থা। ৯ই সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৬ মিনিটে, দলের তরুণ সদস্য অভিষেক আগরওয়াল দুই অভিজ্ঞ গাইড শের সিং ও প্রীতম চাঁদকে সঙ্গে নিয়ে পারি দেন প্রায় ২০,০০০ ফুট উঁচু মাউন্ট দেও টিব্বার শৃঙ্গে। অবসর পেয়ে সেই সময় দলের অন্যান্য সদস্যরা বসে না থেকে বেস ক্যাম্প ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে পথের প্রান্তে পরে থাকা অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের মোড়ক, খালি কন্টেনার.. এই জাতীয় আবর্জনা ইত্যাদি কুড়িয়ে বস্তাভর্তির কাজ জারি রেখেছেন। অভিযান শেষে প্রায় ৪৫ কেজি আবর্জনা মানালি পুর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁরা।