বলরাম না বুদ্ধ, শ্রী বিষ্ণুর নবম অবতার কে?

বিষ্ণুর দশাবতারের অষ্টম অবতার কৃষ্ণ। দ্বাপরযুগেই কৃষ্ণের সঙ্গেই অবতার রূপে অবতীর্ণ হন তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরাম।  ভাগবত পুরাণ অনুসারে দ্বাপরযুগে অনন্ত নাগের অবতার বলরাম রূপে কৃষ্ণের সঙ্গে বলরাম আসেন। অধিকাংশ বৈষ্ণব শাখাসম্প্রদায় বলরামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করেন। সেই অর্থে বলরামকেই বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে দশাবতারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বলরাম শ্রীকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। তিনি বলদেব, বলভদ্র ও হলায়ুধ নামেও পরিচিত। তাঁকে আদি শেষনাগের রূপ বলে মনে করা হয়। দ্বাপর যুগের শেষে বলরামের জন্ম হয় রোহিণীর গর্ভে। রোহিণী হলেন শ্রীকৃষ্ণের পিতা বসুদেবের আর এক পত্নী ও নন্দের ভগিনী।   অত্যাচারী কংসের কারাগারে বন্দী বসুদেব ও দেবকীর সপ্তম গর্ভে বলরাম আসেন, কিন্তু কংসের হাত থেকে সেই শিশুকে বাঁচানোর জন্য শ্রীহরির আদেশে দেবী যোগমায়া দেবকীর সপ্তম গর্ভের ভ্রূণ সেখান থেকে গকুলে নন্দগৃহে রোহিণীর গর্ভে স্থাপিত করেন। এবং রোহিণীর গর্ভে বলরামের জন্ম হয়। যদু /যাদব বংশীয় গুরু গর্গাচার্য রোহিনী পুত্রের নাম দেন বলরাম। বল মানে শক্তি। শক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মিলন হয়েছে বলে তার নাম বলরাম রাখা হয়। এছাড়াও দেবকী গর্ভ থেকে সংকর্ষণ করা হয়েছে বলে তার আরেক নাম সংকর্ষণ । এছাড়াও তাকে হলধর বলা হয় ।

পুরাণ মতে বলরাম নীলবস্ত্র পরিহিতা , কনক ভূষনা ,তার অস্ত্র লাঙল/ হাল।তাই তাঁকে" হলধর"ও বলা হয়। কোনো কোনো মূর্তিতে তাঁর হাতে গদা দেখা যায় ।

আবার গরুড় পুরাণের প্রথম অধ্যায়ে বিষ্ণুর অবতার সমূহের বিবরণ দেওয়ার সময় একাদশ অবতার হিসেবে বুদ্ধের উল্লেখ করা হয়েছে-

“একবিংশতি অবতারে ভগবান কলিযুগের সন্ধ্যা প্রবৃত্ত হইলে দেবদ্বেষীদিগের মোহনারথ কীকটে (মগধ দেশে) জিনসুত বুদ্ধনামে আবির্ভূত হইবেন। কলিযুগের সন্ধ্যার অবসান কালে রাজবরগ নষ্টপ্রায় হইলে, জগৎপতি কল্কি নামে বিষ্ণুযশা নামক ব্রাহ্মণের ভবনে অবতীর্ণ হইবেন”

আবার গরুড় পুরাণের উত্তর খন্ডের ৩০তম অধ্যায় বলা হয়েছে,

“মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, শ্রীরাম, পরশুরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ ও কল্কি পন্ডিতগণ সর্বদা এই দশ নাম স্মরণ করিবেন”।

বৈষ্ণবমতের দশ জন অবতারের মধ্যে বুদ্ধকে নবম অবতার বলে মনে করা হয়।বৈষ্ণব কবি জয়দেবের রচিত ত্রয়োদশ শতকের গীতগোবিন্দতে বলা হয়েছে, প্রাণীহত্যা নিষিদ্ধ করার জন্য বিষ্ণু বুদ্ধ হয়ে জন্মলাভ করেছিলেন।

তবে দশাবতারের মধ্যে সত্যি বিষ্ণু পড়েন কিনা সে বিষয়টি নিয়ে নানারকম মত পাওয়া যায়।

হরিবংশ পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, গরুড় পুরাণ, অগ্নি পুরাণ, নারদ পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, পদ্মপুরাণে অবতার হিসেবে বুদ্ধের উল্লেখ পাওয়া যায়।

সমকালীন হিন্দুধর্মের আলোচনায় কনস্ট্যান্স জোনস, এবং জেমস ডি. রায়ান এর মতে যারা বুদ্ধকে হিন্দুধর্মের আরেকটি রূপ বলে মনে করেন।

মৎস পুরাণ মতে "শুক্রাচার্যের অভিশাপে ভগবান বিষ্ণু সাত বার মাতৃগর্ভে অবতীর্ণ হবেন"। এই সাত অবতার হলো - "কপিলমুনি, দত্তাত্রেয়, পরশুরাম, রাম, ব্যাসদেব, বুদ্ধ ও কল্কি।"

যদিও বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের এই নিয়ে ভাবনার সংঘাত আছে। অষ্টম শতাব্দীতে বুদ্ধকে পূজায় হিন্দু দেবদেবীদের দ্বারা প্রতিস্থাপন করার প্রবনতা শুরু হয়েছিল। এই সময়েই বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতারে পরিণত করা হয়েছিল।

মহারাষ্ট্রের ভার্করি বৈষ্ণব সম্প্রদায়  ভগবান বিঠোবাকে পুজো করে। বিঠোবা ভিট্টাল, পান্ডুরঙ্গ নামেও পরিচিত। যদিও বিঠোবাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোট্ট কৃষ্ণের একটি রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।  তবে বহু শতাব্দী ধরে এই বিশ্বাস বিঠোবা আসলে বুদ্ধের একটি রূপ।

মহারাষ্ট্রের অনেক কবি একনাথ, নামদেব, টুকরাম প্রমুখ বিঠোবাকে কৃষ্ণ তথা বুদ্ধ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যদিও অনেক নব্য-বৌদ্ধ এবং অনেক পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা মতটিকে মানতে নারাজও ছিলেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...