আজ কালী কথায় নবাবের জেলার এক কালী মন্দিরের কাহিনি। মুর্শিদাবাদ বহু ধর্মের মিলনক্ষেত্র সেই স্মরণাতীত কাল থেকে, এখানে রয়েছে মন্দির, মসজিদ, গির্জা। এখানে যেমন বৈষ্ণবদের আখড়া পাবেন, তেমনই পাবেন শক্তিপীঠ কিরীটেশ্বরী। তবে আজ এক অন্য কালী মন্দিরের কথা। তার ইতিহাসও অনন্য। মন্দিরটির বয়স একশো পেরিয়েছে। বহরমপুরের কাশিমবাজার ভাটপাড়ায় রয়েছে কৃপাময়ী কালীবাড়ি। মন্দিরের বয়স ১২৮ বছর। কাশিমবাজারের রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর রাজবাড়িতে কুলপুরোহিত শুধাংশু শেখর চট্টোপাধ্যায় এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা করেন। তখন ছিল মাটির মন্দির। রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র পাকা মন্দির তৈরি করে দেন। আজ সেই মন্দিরেই মা পূজিতা হচ্ছেন। কথিত আছে, বহরমপুর এলাকার তিন জাগ্রত দেবী হলেন তিন বোন। এরা হলেন আনন্দময়ী, করুণাময়ী ও কৃপাময়ী।
বহরমপুরে কৃপাময়ী কালী মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। জানা যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কৃপাময়ী কালী মন্দিরে গোপন আস্তানা তৈরি করেছিলেন। শোনা যায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও এখানে আসতেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই মন্দির। ব্রিটিশ আমলে মন্দির চত্বরে মানুষের বসবাস ছিল না। ফলে এই মন্দির হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের গোপন ডেরা। মন্দিরে নিত্য পুজো হত, পুরোহিত রোজ আসতেন। পুরোহিতই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এখানে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করতেন।
কৃপাময়ী কালী মন্দিরে একবার ডাকাত পড়েছিল কিন্তু মায়ের কৃপায় ডাকাতি হয়নি। দুপুরে এসে ডাকাতরা মন্দিরে গা ঢাকা দিয়েছিল। ভোরে মন্দিরে ডাকাতি করে পালানোর সময়, হঠাৎই কাঁসার বাসন পড়ে যায়। সেই সময় মন্দিরের পুরোহিতের পরিবারের এক সদস্যও দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে তিনি জানতে পারেন মন্দিরে ডাকাতি হচ্ছে। তখনই মন্দিরে ছুটে আসে তিনি। গুলি করে এক ডাকাতকে মেরে ফেলেন। ডাকাতরা নাকি মূর্তির গা থেকে গয়না খোলার সময় মায়ের একটি পা ভেঙে ফেলেছিল। তারপর বারাণসী থেকে আবার কষ্ঠিপাথর নতুন মুর্তি গড়িয়ে নিয়ে আসা হয়। কৃপাময়ী কালী মাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুরনো মূর্তিটি আনন্দময়ী কালী মন্দিরে রাখা হয়। আজ তা সেখানেই রাখা রয়েছে।
মন্দিরের কাছে রয়েছে শিবের মন্দির। সেখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। তিনিও নিত্য পুজো পান। দেবী কালিকার মূর্তি কষ্টিপাথরের, গলায় রয়েছে মুণ্ডমালা। দেবী অলঙ্কারে ভূষিতা। দেবীর জিভটি সোনার। উঁচু বেদির উপর দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় করেন। পুজো দেন।