“হিঃ হিঃ! বাহাদুর জলের নলটাকে সাপুড়ের বাঁশী বাজিয়ে সাপের মতো নাচাতে চাইছে।
আরিব্বাস!
দুর্দান্ত বাহাদুর! কী করে করছ, আমাদের দেখাও।”
বাহাদুরের সটান উত্তর ‘অবশ্যই না।’
তারপরে কী ঘটল সেটা জানার জন্য গোগ্রাসে গিলতে হয় বইয়ের পাতাগুলো। বাঙালি পড়ুয়াদের কাউকে বলে দিতে হয় না বাহাদুর আসলে কে!
বাহাদুর বাংলা সাহিত্যের নারায়ণী সেনার অন্যতম সৈনিক। একেবারে মানুষেরই মতো বাহাদুর এক বেড়াল। তবে মোটেই আলুথালু তুলোর বল নয়, বেজায় দস্যি। দারুণ তার বুদ্ধি। বড়দের ‘বাহাদুর’, খুদেদের ‘বাহাদুরদা’। কালো পিঠ ার সাদা বুকের এই মার্জার আবার ‘সায়েন্স’ ভালবাসে। যেমন ছটফটে তার স্বভাব তেমনি কটকটে তার কথা। জমজমাট সব কান্ডকারখানা বাঁধায়। তাক লেগে যায় সকলের। তার কান্ড দেখে মনে হয়, বুদ্ধির জোরে কাত করতে পারে নন্টে-ফন্টে কিংবা হাঁদাভোঁদাকেও। আর জনপ্রিয়তায় বলে বলে গোল দিতে পারে বড়মাঠের দাদা প্লেয়ার টম আর জেরিকেও।
১৯৮২ সালে শুকতারায় প্রথম প্রকাশ। রঙিন এই কমিকস তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল পাঠকদের মধ্যে। তারপর তিনপ্রজন্ম ধরে তার জনপ্রিয়তার ধারা বহমান।
চল্লিশ বছর বয়স পেরিয়ে গিয়েছে বাহাদুর, কিন্তু মাছ খেতে সে বড় ভালবাসে। মাছ ফুরলেই নদী চলে যায়। হাতে বালতি। ফিরে আসে মাছ ভর্তি করে। কাঁটাটি পড়ে থাকে, মাছটি পেটে যায়। তার মাছ খাওয়া দেখে লোভ লাগে পাঠকের। মনে হয় যায় ঘুরে আসি বাজার থেকে। আর যারা খুদে সোনামুখ করে খেয়ে নেয় মাছভাত।
মাছ ধরতে আশ্চর্য এক রকেট বানায় সে। পুজোর ছুটিতে পেল্লায় রকেটখানা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পা&চিল ঘেরা জলাশয়ে গিয়ে রকেট দিয়েই ধরে আনে মাছ, তাও আবার মালিকের চোখের সামনে দিয়েই। কান্ডটা যে কী করল বাহাদুর, সে বোঝার জন্য ফিরে ফিরে আসতে কমিকস বইয়ের পাতার কাছে।
সময় এগিয়েছে। বয়স বেড়েছে বাহাদুরের। বয়স বেড়েছে বাহাদুর-পড়ুয়াদেরও, কিন্তু বাহাদুর থেকে গিয়েছে সেই একই রকম দস্যি।
তাঁর স্মৃতি-কথায় বাহাদুর স্রষ্টা লেখেন, “আমিও এখন বয়স ভারাক্রান্ত, তবু ছোটদের ভালোবাসি বলে, এখনও তাদের জন্য তুলি-কলম ছাড়তে পারিনি।”
অকুণ্ঠ ভালবাসায় তাঁকে ভরিয়ে দিয়েছে পাঠকরা। তাঁর নিজের কাথায় সেই ভালবাসাটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় পাওয়া। বাঙালির ছোটবেলাকে সহজ মজা আর খুশিতে মুড়ে দিয়েছিলেন তিনি তাঁর তুলি-কলমের জাদুতে। সে ঋণ কখনও এই জাতি ভুলতে পারবে না।