বাচ্চাওয়ালি তোপ

বাংলার নবাবী শহর বলতে মুর্শিদকুলির নামাঙ্কিত মুর্শিদাবাদকেই বোঝায়, যার প্রকৃত নাম ছিল মকসুদাবাদ। এই শহর স্বাধীন বাংলার নবাবি শাসনের সূচক, আবার ব্রিটিশ রাজের নবাবকে ক্রীড়নকে পরিণত করে বাংলা লুণ্ঠন এবং দ্বিচারী শাসন এই শহর থেকেই আরম্ভ হয়েছিল। গোটা শহরের গায়ে লেগে আছে ষড়যন্ত্রের গল্প, লুকিয়ে আছে দক্ষ প্রশাসক নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র দাপট, নবাব আলিবর্দি খাঁ-র চাতুর্য কিংবা পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার অসহায়তার কথা। যার কিছুটা স্পষ্ট চিত্র পরিলক্ষিত হয় পর্যটকদের কাছে হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, ইমামবাড়া, বাচ্চাওয়ালি তোপ, মতিঝিল পার্ক, জাহানকোষা কামান, দাফরাগঞ্জ প্রাসাদের মাধ্যমে

               মুর্শিদাবাদের সবথেকে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। ভাগীরথী নদীর পুব দিকে তিনতলা বিশাল এক বাড়ি। এই অট্টালিকার উত্তরে রয়েছে বাংলার সবথেকে বড়ো ইমামবাড়া। হাজারদুয়ারি আর ইমামবাড়ার মাঝখানে মাঠের মধ্যে সাদা মদিনা দেখতে পাওয়া যাবে। এটা সিরাজ-উদ-দৌলার সময়ের একমাত্র স্থাপত্যের নিদর্শন। মদিনার পাশেই আছে এই বিশাল বিখ্যাত কামান - যা বাচ্চাওয়ালি তোপ নামেই খ্যাত। যিনি হাজারদুয়ারি তৈরি করিয়েছিলেন, সেই নবাব হুমায়ুন জা-র আমলে এই বিরাট কামান ভাগীরথী নদীর গর্ভ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। বাচ্চাওয়ালি তোপ কবেকার, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। কিছু মানুষ মনে করেন, এই তোপ সম্ভবত ১৩-১৪ শতকের গৌড়ের কোনো সুলতানের আমলে বানানো হয়েছিল। কেউ বলেন, এটি ছিল বাংলার সুলতান ইলিয়াস শাহের কামান। তবে সব থেকে প্রচলিত মত হচ্ছে, ঢাকার বিশিষ্ট লোহার মিস্ত্রি জনার্দন কর্মকার এটা তৈরি করেছিলেন ১৬৪৭ সালে। এই জনার্দন কর্মকার আরেকটি বিখ্যাত কামান বানিয়েছিলেন, তার নাম জাহানকোষ। বিশাল এই বাচ্চাওয়ালি কামান ১৮ ফুট লম্বা, ব্যাস ২২ ইঞ্চি আর প্রায় ৭৬৫৭ কিলোগ্রাম ভারী। এই কামান দাগার জন্য প্রয়োজন হত ১৮ সের মশলা বারুদ।

                         এই কামানটি কেবলমাত্র একবার চালানো হয়েছিল এবং চালানোর পর এটি প্রায় ১০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে একটি বিশাল বিস্ফোরক শব্দ তৈরি করে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই শব্দ সৃষ্টির ফলে শহরের বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলারা এতটাই আতংকিত হয়ে পড়েছিলেন, যে তৎক্ষণাৎ তাদের সন্তানের প্রসব করানোর মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই থেকেই এই কামানের নাম দেওয়া হয়েছে, বাচ্চাওয়ালি তোপ। বাচ্চাওয়ালি অর্থ যিনি সন্তানের জন্ম দেন এবং তোপ মানে কামান  দাগা হয়(যখন কামান দাগা হয়, তখন সন্তানের প্রসব হয়)। তারপর থেকে এই ভয়ংকর কামান আর ব্যবহার করা হয় নি।

         

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...