আজ রামনবমীতে বেলা ১২টায় রামলালার ললাট উজ্জ্বল হবে সূর্য তিলকে

চৈত্র শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে পালিত হয় রাম নবমী। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এদিনই জন্মগ্রহণ করেন শ্রীরামচন্দ্র। চৈত্র নবরাত্রির শেষ দিনে রাম নবমী পালিত হয়।

এ বছর চৈত্রমাসের শুক্লাপক্ষের নবমী তিথি শুরু হবে আগামী ১৬ এপ্রিল, দুপুর ১.২৩ মিনিটে৷এই তিথি থাকবে পর দিন অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল দুপুর ৩.১৪ পর্যন্ত৷

বিষ্ণুর দশ অবতারের মধ্যে সপ্তম অবতার রাম। তিনি হিন্দুধর্মের সবচেয়ে লোকপ্রিয় দেবতা। শুধু ভারত নয়, সামগ্রিক দক্ষিণ এশিয়াতেই তাঁর প্রভাব। ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। এদেশের মানুষের মুখে সুখে জয়রাম, দুখে হে রাম লেগেই থাকে। দেশিয় সংস্কৃতিতে অঞ্চলভেদে বদলে গিয়েছে রামের রূপ। কখনও তিনি আদর্শপুত্রের উদাহরণে রামলালা, কখন আদর্শ রাজা, রাজারাম। তাঁকে বলা হয় ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম, অর্থাৎ পুরুষ শ্রেষ্ঠ, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিপতি।

ব্যক্তিনাম হিসেবে "রাম" শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বিষ্ণুর সহস্রনাম স্তোত্রে বিষ্ণুর ৩৯৪তম নামটি হল রাম।

সূর্যবংশে জন্ম নিয়েছিলেন রাম। উক্ত বংশের রাজা রঘুর নাম অনুসারে সেই বংশের পরে নাম হয় রঘু বংশ। রামনবমীতে রামজন্মোৎসব পালিত হয়। ত্রেতা যুগে অযোধ্যায় তাঁর জন্ম। পিতা রাজা দশরথ, মাতা কৌশল্যা। রামের স্ত্রী সীতা। মনে করা হয় তিনি লক্ষ্মীর অবতার।

পিতার সম্মানরক্ষার্থে তিনি সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করে চৌদ্দ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন। স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণও তার বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারবেন না বলে তার সঙ্গে গিয়েছিলেন। তারা একসঙ্গে চৌদ্দ বছর বনে কাটিয়েছিলেন। বনবাসকালে লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর রাম হনুমানের মাধ্যমে জানতে পারেন যে সীতা লঙ্কায়। তখন বানর সেনা দিয়ে লঙ্কায় যাওয়ার জন্য সেতু নির্মাণ করেন। আর রাবণের বিরাট রাক্ষস বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে রাবণ পরাজিত হন। রাম সীতাকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। সেখানে তার রাজ্যাভিষেক হয়। পরে তিনি একজন সম্রাটে পরিণত হন। তার রাজ্যে প্রজারা সুখে, শান্তিতে বাস করত এবং রাজ্যের সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার অব্যাহত ছিল।

রামের জীবনের কাহিনি যাত্রাপথ নিয়ে সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ রচনা করেছিলেন মহর্ষি বাল্মীকি। রামায়ণ কথার অর্থ শ্রী রামের যাত্রা। রামায়ণ ৭টি কাণ্ড (পর্ব) ও ৫০০ সর্গে বিভক্ত ২৪,০০০ শ্লোকের   ৩২-অক্ষরযুক্ত  অনুষ্টুপ ছন্দে রচিত।  সর্বপ্রাচীন পুথিটি খ্রিষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে লিখিত। বাংলায় রামায়ণ অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা।

উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাম নবমী অত্যন্ত বিশেষ ভাবে পালিত হয়। ভোরবেলা স্নান সেরে পুজো অর্চনা করে দিন কাটানো হয়। এদিনটা উপবাস রাখাই নিয়ম। অনেক জায়গায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের রাম, লক্ষণ, সীতা সাজিয়ে রথে বসিয়ে শহর পরিক্রমা করা হয়।

এ বছর অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের পর রাম নবমী আরও বিশেষ হবে। রাম নবমী নিয়ে মানুষের মনে কৌতূহল বেড়েছে। এ বছর রামনবমী উপলক্ষে অযোধ্যার রাম মন্দিরে ভগবান রামলালার সূর্য তিলক করা হবে। রামনবমীতে রামলালার কপাল উজ্জ্বল হবে সূর্য তিলকে। প্রায় ৪ মিনিট ধরে সূর্য তিলক দেখা যাবে রামলালার কপালে।

রাম নবমীতে রাম মন্দিরে পাঠানো হবে ১,১১,১১১ কেজি লাড্ডু প্রসাদ। দেবরাহা হংস বাবা ট্রাস্টের তরফে রাম মন্দিরে রাম নবমীতে ১ লক্ষ ১১ হাজার ১১১ কেজি লাড্ডু পাঠানো হবে। রামলালাকে উৎসর্গ করার পর,  ওই দিন মন্দিরে যে ভক্তরা আসবে তাদের মধ্যে সেই লাড্ডু বিলিয়ে দেওয়া হবে। ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হবে রামলালাকে। মন্দির চত্বরে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে । সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ১৬, ১৭ এবং ১৮ এপ্রিল মন্দির ২০ ঘন্টা করে দর্শনের জন্য খোলা থাকবে রামলালার দরজা।মনে করা হচ্ছে, রাম নবমী উপলক্ষে প্রায় ৪০ লক্ষ ভক্ত আসতে পারেন।অযোধ্যায় নবমী মেলা শুরু হয়েছে ৯ এপ্রিল এবং শেষ হবে ১৭ এপ্রিল।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...