গাইনি সমস্যা বা স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত হলে আজও তা সামনে আনা এবং শুরু থেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে দ্বিধা লজ্জায় ভোগেন মহিলারা। গ্রাম বা ষহর নির্বিশেষে। স্বাস্থ্য নিয়ে যথাযথ সচেতনতার অভাব এক্ষেত্রে ভূমিকা নেয়। তবে আস্তে আস্তে এই ছবি বদলাতে শুরু করেছে।
মহিলাদের মধ্যে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার, ওভারিয়ান সিস্ট, ইউটেরাসের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন আনন্দলোক হসপিটালের গাইনোকোলজিস্ট ডাঃ সুব্রত সাহা রায় (Dr. Subrata Saha Roy, Gynecologist) ।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মহিলা মারা যান সার্ভাইক্যাল ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে।
জরায়ুর নীচের অংশকে সারভিক্স বলে। এই অংশে ক্যানসার হলে তাকে জরায়মুখ বা সার্ভাইক্যাল ক্যানসার বলে। ‘হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস’ (এইচপিভি) হল জরায়মুখের ক্যানসারের একটি কারণ। অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, একাধিক সঙ্গী, ঘন ঘন সন্তান এসবের কারণেও এই ক্যানসার হতে পারে। ৩৮ থেকে ৪২ বছর বয়সি মহিলারা এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি।
এই ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব। তবে এই সমস্যা হলেই যে তা ক্যানসারের লক্ষণ এমন ভাবার কারণ নেই। প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা করা হয়। তারপর আসে বায়োপসি পর্ব। বায়োপসিতে রোগ কোন স্টেজে আছে বোঝা হয়। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা স্থির করা হয়।
প্রথম দুই স্টেজে অপারেটিভ ট্রিটমেন্ট করা হয়। বাকি স্টেজে রেডিয়োথেরাপি। সঠিক চিকিৎসায় সারভাইক্যাল ক্যানসারে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা উজ্বল।
ফাইবরয়েড টিউমার, এডিনোমাইসিস, ক্যানসারের কারণে ইউটেরাস অপারেশন হিস্টেরেক্টোমি হয়ে থাকে।
ইউটেরাস অপারেশন চল্লিশের পর বেশি দেখা যায়। কমবয়সীদের মধ্যে কিছু টিউমারের ক্ষেত্রে সার্জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভ্যাজাইনাল হিস্টেরেক্টোমি, ওপেন হিস্টেরেক্টোমি এবং ল্যাপারোস্কোপিক হিস্টেরেক্টমি এই তিন ধরনের সার্জারি হয়।
হিস্টেরেক্টোমি নিয়ে একাধিক ভ্রান্ত ধারণা প্রচিক আছে। কিন্তু তা অনেককাংশে ঠিক নয়। সার্জারির পর হট ফ্ল্যাশের সমস্যা হয়ে থাকে। সঠিক কাউন্সিলিং করালে তা সেরেও যায়।
কমবয়সী মহিলাদের মধ্যে ওভারিয়ান সিস্ট কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল। ওভারির মধ্যে যে মাংসল বৃদ্ধি ঘটে, তাকেই সিস্ট বলে। এক ধরনের সিস্ট তৈরি হয়, যারা নিরীহ। সিস্টের কারণে কোনও ক্ষতি হয় না। দ্বিতীয়ত, কিছু সিস্ট তৈরি হতে পারে, যেগুলি ম্যালিগন্যান্ট। ৯০ শতাংশ সিস্টে লক্ষণ থাকে না।
সিস্ট অনেকটা জীবনযাত্রার কারণেও হয়ে থাকে। আবার পরিবার বিশেষ করে বাবা-মাইয়ের ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে তাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
ওষুধ থাকলেও সিস্ট প্রতিরোধে প্রধান ওষুধ লাইফস্টাইল। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ঘুম সুস্থ থাকে সর্বাধিক জরুরী এ কথা মনে রাখতে হবে।
মহিলাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কথোপকথন, মহিলা চিকিৎসকের উপস্থিতি খোলামেলা কথাও নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।