আজ ভাদ্রস্য প্রথম দিবস, আজি শরৎ জাগ্রত দ্বারে

আজ ভাদ্রস্য প্রথম দিবস, আকাশের দখল নিয়েছে সাদা, শ্বেতশুভ্র মেঘ। মাঠের দখল নেবে কাশফুল, আজি শরৎ জাগ্রত দ্বারে। প্রতিবার শরৎ আসে নববধূর মতো, নূতনের সমারোহে। মহাকবি কালিদাস লিখে গিয়েছে, "প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎ কাল সমাগত।"

ভাদ্র বাঙালির কাছে উৎসব নিয়ে আসে। এ শরতেই তো অকাল বোধন। ভাদু গান, ভাদ্র কাটা, বিশ্বকর্মা পুজো, মনসার আরাধনা, রান্না পুজো...শুরু উৎসবের মরসুম। 

 

রবি ঠাকুরের ঋণ নিয়ে বলতে হয়, 

শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি

ছড়িয়ে গেল ছাড়িয়ে মোহন অঙুলি।

শরৎ তোমার শিশির-ধোয়া কুন্তলে

বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে। 

আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।

 

শরতের চারটি দিনের জন্য অপেক্ষা করে গোটা বাঙালি জাতি। পুজোর সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে বাণিজ্যও, দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে কত মানুষের সারা বছরের ভাতের জোগাড় হয়। তিনি দুর্গতি, দুঃখ নাশ করেন, তাই তিনি দুর্গা। বাড়ির কেউ যাত্রা করলে, বড়রা বলেন 'দুগ্গা দুগ্গা'। কামনা থাকে, সফর নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হোক। যাত্রা শুভ হোক। বিশ্বাস থাকে, যাত্রাপথে ঘরের মানুষটিকে আপদ-বালাই স্পর্শ করতে পারবে না। কারণ, দুর্গা সহায় হবেন। দুর্গাকে এতটাই ভরসা বাঙালির। 

বিসর্জনের পর কলাপাতায় খাগের কলম দিয়ে লাল কালিতে তিনবার 'শ্রীশ্রীদুর্গাসহায়' লিখে দেবীর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানানোর রেওয়াজ ছিল। বাসনা একটাই দেবী যেন সহায় হন। যিনি সহায় হন, তিনি আবির্ভূতা হন কালটিতেই।

ঋগবেদের সময়ে এক শরৎ থেকে আরেক শরতে বছর গণনা করা হত। শরৎ ঋতুতেই বছর আরম্ভ হত। তখন দীর্ঘায়ু কামনায় বলা হত, 'জীবেম শরদ শতম'। যা আজকের দিনে শতায়ু কামনায় পরিণত হয়েছে। বিজয়া দশমী ছিল শরৎ বর্ষের প্রথম দিন, অর্থাৎ নববর্ষের প্রথম দিন। দিনটিতে প্রার্থনা করা হত 'নববর্ষে সকলের বিজয় হউক'।

এই শরতেই রামচন্দ্র অকাল বোধন করে জয়ী হয়েছিলেন, হারিয়েছিলেন লঙ্কা নরেশ রাবণকে। বলা হয়, এ সময় দেবতাদের নিদ্রাকাল। তৎসত্ত্বেও; শরৎ হচ্ছে দেব ও দেবী আরাধনার শ্রেষ্ঠ। তাই বলা হত, 'শারদেন ঋতুনা দেবাঃ'। বর্ষার পর পরিবেশ সবুজ হয়ে ওঠে, বৃষ্টি প্রায় থাকেই না। না-শীত, না-গরম সময়। মাঠ ভর্তি হয়ে ওঠে শস্যে। 

বাজসনেয়ী সংহিতায় রয়েছে, 'ইষশ্চোর্জশ্চ শারদাবৃতু'। বারবার শরৎকেই বলা হচ্ছে দেবারাধনার শ্রেষ্ঠ সময়। আজ থেকে সে শরৎ'র শুভারম্ভ হল। 





 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...