প্রথম টেস্টে শোচনীয় পরাজয়ের পর ইংল্যান্ড শিবির মরিয়া ছিল ক্রিকেটের মক্কা লর্ডস-এ দ্বিতীয় টেস্টে সমতা ফেরাতে। কিন্তু বৃষ্টিবিঘ্নিত এই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে অস্ট্রেলিয়া শেষপর্যন্ত রক্ষা করল নিজেদের। কিন্তু এক দুর্ধর্ষ ও ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচের সাক্ষী থাকল লর্ডস-এর দর্শক সহ গোটা ক্রিকেট বিশ্ব।
লর্ডস-এ অনুষ্ঠিত হওয়া অ্যাসেজ এর দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিন একেবারে বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই শুরু হল ব্যাট ও বলের চিরাচরিত লড়াই। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার জস হেজেলউড-এর সুইং এ কাত হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড-এর টপ অর্ডার। ওপেনার জেসন রয়ের খারাপ ফর্ম অব্যাহতই ছিল, অন্যদিকে অধিনায়ক জো রুটও সেরকম সুবিধা করতে পারেননি। ২৬/২ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেন আরেক ওপেনার রোরি বার্নস (৫৩) ও জো ডেনলি (৩০)। কিন্তু তারা দুজনে আউট হওয়ার পর আবারও খারাপ পরিস্থিতিতে চলে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। বেন স্টোকস (১৩) যখন আউট হন তখন ইংল্যান্ডের স্কোর ১৩৮/৬। শেষের দিকে উইকেটকিপার জনি বেয়ারস্টো (৫২) ও ক্রিস ওকস (৩২)-এর প্রতিরোধকারী ইনিংস ইংল্যান্ডকে ২৫৮ রান অবধি নিয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ভালো বোলিং করেন জস হেজেলউড (৩-৫৮), প্যাট কামিন্স (৩-৬১) ও নাথান লিয়ন(৩-৬৮)
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ডেভিড ওয়ার্নার (৩)-এর উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর ক্যামেরন ব্যাঙ্কক্রফট ও উসমান খোয়াজা পরিস্থিতি সামলালেও তাদের উইকেট পড়লে আবারও চাপে পড়ে যায় অসিদের ব্যাটিং। তখন একা কুম্ভ হয়ে লড়াই চালান স্টিভ স্মিথ (৯২)। দুর্দান্ত খেলছিলেন তিনি, কিন্তু ইংল্যান্ড-এর ফাস্ট বোলার জোফ্রা আর্চারের বাউন্সারে ঘাড়ে চোট পান তিনি। আর আইসিসি এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী যদি কোনও ব্যাটসম্যান মাথায় বা ঘাড়ে চোট পান তাহলে তাকে সুশ্রুষার জন্য ড্রেসিংরুমে যেতে হবে। পরে আবারও ব্যাট করতে নামলে স্মিথ প্রায় শতরানের দোরগোড়ায় এসে আউট হন। শেষপর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া অল আউট হয় ২৫০ রানে। স্টুয়ার্ট ব্রড (৪-৬৫)-এর বোলিং ফিগার সবথেকে ভালো হলেও আদতে অস্ট্রেলিয়াকে নাকানিচোবানি খাইয়েছেন জোফ্রা আর্চার (২-৫৯)। তার আগুনে পেস সামাল দিতে পারছিল না অসি ব্যাটসম্যানরা।
এরপর ব্যাট করতে নেমে প্যাট কামিন্স-এর জোড়া ফলায় শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু আবারও প্রথম ইনিংসের মত পরিস্থিতি সামাল দেন বার্নস (২৯) ও ডেনলি (২৬)। তারা আউট হয়ে গেলে ক্রিজে নামেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। আর নেমেই তিনি আক্রমনের প্রতি আক্রমন শুরু করেন।নিজের টেস্ট কেরিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করে স্টোকস, (১১৫ নট আউট) ইংল্যান্ডকে ভালো পরিস্থিতিতে নিয়ে আসেন। পঞ্চম দিনে শেষপর্যন্ত ২৫৮/৫ স্কোরে ডিক্লেয়ার করে ইংল্যান্ড। আর এই ডিক্লেয়ারের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৮ ওভারে ২৬৭ রান করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল রুটরা।
রান তাড়া করতে নেমে একেবারে খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। ১৯/২ স্কোর, এই অবস্থায় স্মিথের বদলি হিসেবে নেমে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের পাতায় নাম লিখলেন মারনাস লাবুশেন। প্রথম বদলি ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ব্যাট করতে নামলেন। আর স্মিথের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করেন লাবুশেন (৫৯)। শেষ পর্যন্ত ট্রাভিস হেড-এর ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত টেস্ট বাঁচাল ব্যাগি গ্রিন্সরা। ফলাফল সিরিজে এখনও ১-০ এ এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া।