এভাবেও ফিরে আসা যায়। নিজেদের ঘরের মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ হারার পর সকলেই একপ্রকার ঘোষণা করে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার অন্ধকার ভবিষ্যতের। স্মিথ-ওয়ার্নার এর অনুপস্থিতি যেন অস্ট্রেলিয়াকে বেশ পিছিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু প্রাক-বিশ্বকাপ সময়কালে তারা নিজেদের চেনা ছন্দ ফিরে পায়। আর সোমবার এজবাস্টনে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে যেন সকল নিন্দা সুদে-আসলে মিটিয়ে নিল টিম পেইন-এর অস্ট্রেলিয়া। এবছরের অ্যাসেজ এর প্রথম টেস্ট ম্যাচে ২৫১ রানে নাটকীয় হার ইংল্যান্ডের।
এজবাস্টনে মেঘলা দিনে যখন শুরুতেই ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন, তখন অবাক হয়ে যায় গোটা ক্রিকেট মহল। ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যাঙ্কক্রফট যখন ব্যাট করতে নেমেছিল, তখন ইংরেজ দর্শকদের তরফ থেকে আসছিল চুড়ান্ত বিদ্রুপ। স্যান্ডপেপার দেখানো হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্যে। আর অন্যদিকে ছিল ইংরেজ বোলারদের চুড়ান্ত পর্যায়ের বোলিং। ৪ ওভার বল করেই জেমস অ্যান্ডারসন চোটের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেলেও স্টুয়ার্ড ব্রড ও ক্রিস ওকস একেবারে ধরাশায়ী করে দিয়েছিলেন অসি ব্যাটসম্যানদের। নিজেদের প্রত্যাবর্তন ম্যাচে ভালো খেলতে পারেননি ওয়ার্নার (২) ও ব্যাঙ্কক্রফট (৮)। একসময়ে ১২২/৮ এ ধুঁকছিল অস্ট্রেলিয়া। সেইসময় লড়াকু যোদ্ধার মত টিকে ছিল আর এক প্রত্যাবর্তনকারী স্টিভ স্মিথ (১৪৪)। পিটার সিডল (৪৪) ও নাথান লিয়ন (১২)-কে সঙ্গে নিয়ে স্মিথ একা রাজার মত খেলছিলেন, আর তুলে নিয়েছিলেন কেরিয়ারের ২৪তম শতরান। তার লড়াকু মানসিকতা ও টেলএন্ডারদের দুর্দান্ত সহায়তায় অস্ট্রেলিয়া পৌছায় ২৮৪ রানে। ইংল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন স্টুয়ার্ট ব্রড (৫-৮৬) ও ক্রিস ওকস (৩-৫৮)
ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ওপেনার জেসন রয় (১০) এর উইকেট হারালেও আর এক ওপেনার রোরি বার্নস শতরানের পার্টনারশিপ তোলেন অধিনায়ক জো রুট (৫৭) এর সাথে। এরপর মাঝে বাটলার ও ডেনলির উইকেট পড়লেও ফের সামাল দিতে পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছিলেন বার্নস ও বেন স্টোকস। অর্ধশতরান করে স্টোকস ফিরে যাওয়ার পরেই অসি বোলাররা ছন্দ ফিরে পায়। কেরিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক শতরান করার পর বার্নস (১৩৩) অভ্যর্থনা পান দর্শকদের কাছ থেকে। এরপর শেষের দিকে ক্রিস ওকস (৩৭) ও স্টুয়ার্ড ব্রড (২৯) এর ইনিংসে ইংল্যান্ড পৌছায় ৩৭৪ রানে।
৯০ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে আবারও ব্যর্থ হন অসি ওপেনাররা। আর আবারও হাল ধরেন স্টিভ স্মিথ। কিন্তু এবার, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা তার সঙ্গ দিয়েছিলেন। উসমান খোয়াজা (৪০) আউট হওয়ার পর মুশকিলে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ট্রাভিস হেড (৫১)-কে নিয়ে ধৈর্যশীল ইনিংস খেলছিলেন স্মিথ। শতরানের পার্টনারশিপ করার পর যখন হেড আউট হন, তখন মোটামুটি একটি ভালো জায়গায় ছিল ব্যাগি গ্রিনসরা। কিন্তু ভালো জায়গা থেকে জেতার জায়গায় নিয়ে যান ম্যাথু ওয়েড। স্মিথ (১৪২) নিজের ২৫তম টেস্ট শতরান তুলে নিলেও আসল কাজটি করে যান ওয়েড। ঘরোয়া ক্রিকেটে চুড়ান্ত ফর্মে থাকা এই ক্রিকেটার নিজের তৃতীয় টেস্ট শতরানটি তুলে নেন। শেষের দিকে টেলএন্ডার জেমস প্যাটিনসন (৪৭) ও প্যাট কামিন্স (২৬) এর আক্রমণাত্মক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৪৮৭/৭ স্কোরে ইনিংস ছাড়ে।
৩৯৮ রানের লক্ষ্য নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে আসা ইংল্যান্ড যে চাপে থাকবে তা বুঝতে পেরেছিল অজি বোলাররা। আর তাই সঠিক লাইন ও লেংথে বল করে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলে দিয়েছিল কামিন্সরা। কিন্তু পিচের রুক্ষতাকে কাজে লাগায় নাথান লিয়ন। তার সাবেকি অফ স্পিনে কাঁটার মত ঘুরছিল বল। আর তাতেই নাস্তানাবুদ লম্বা ইংরেজ ব্যাটিং লাইন আপ। রোরি বার্নস (১১), জেসন রয় (২৮), জো রুট (২৮), জো ডেনলি (১১) ও শেষের দিকে ক্রিস ওকস (৩৭) ছাড়া সকলেই এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়ে যান। নাথান লিয়ন মাত্র ৪৯ রান দিয়ে ৬টি উইকেট নেন, এবং বাকি ৪টি নেন প্যাট কামিন্স।
দুই ইনিংসে শতরান করে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ। প্রত্যাবর্তনের টেস্টে এসেই শতরান, এমন মুহুর্ত বোধহয় ক্রিকেটেই সম্ভব। পঞ্চম অসি ক্রিকেটার হিসেবে অ্যাসেজে দুই ইনিংসে শতরান করে ইতিহাস গড়লেন স্মিথ, এবং তৃতীয় অসি ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংল্যান্ডে এই নজির গড়লেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টটি হবে ১৪-১৮ আগস্ট ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে।