একদিকে বৃষ্টিহীন আর্দ্রতার কারণে বাংলা, বিশেষত দক্ষিণবঙ্গ যখন নাজেহাল, তখন লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জলের নিচে তলিয়ে গেল অসমের ১১টি জেলা। যেকোনো মূহুর্তেই বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলতে পারে ব্রহ্মপুত্র। জারি হয়েছে ‘হাই-অ্যালার্ট’। উত্তর বঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভুটানের পাহাড়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টির দরুন ফুঁসছে তিস্তা-তোর্সা-রায়ডাক'ও।
চলতি মরসুমে ইতিমধ্যেই অসমে বন্যা পরিস্থিতি। বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে লখিমপুর, বিশ্বনাথ, ধেমাজি, দারাং, যোরহাট, বরপেটা, মাজুলি, নলবাড়ি, চিরাং, ডিব্রুগড় ও গোলাঘাটের মতো জেলাগুলো। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বন্যার জেরে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। তবে মৃতের সংখ্যা যেকোনো সময় বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দুর্যোগ কবলিত এলাকাগুলিতে প্রায় ২৫০ জনকে ১৩টি আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে।
অপর দিকে, ভুটান পাহাড়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে টানা বৃষ্টির প্রভাবে ফুঁসছে তিস্তা, তোর্সা, কালজানি, লিস, ঘিস, রায়ডাকের মতো নদীগুলি। একটানা বৃষ্টির জেরে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। আলিপুরদুয়ারের বাগরাকোট সংলগ্ন অঞ্চলে রেল লাইনে ফাটল ধরা পড়েছে। বাতিল করা হয়েছে ৮টি ট্রেন, ঘুরপথে চালানো হচ্ছে আরও বেশ কয়েকটি। পাহাড়েও ধসের জেরে ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে ঐতিহ্যবাহী টয়ট্রেন পরিষেবা।
প্রশাসনের ধারণা, বৃষ্টিপাত আরও বেশিমাত্রায় হলে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ডুয়ার্স ও অসমগামী রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেবক ও কালিঝোরায় ধসের ফলে দার্জিলিং ও সিকিমগামী পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে আটকে পড়েছে একের পর এক পর্যটক বোঝাই গাড়ি ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য পর্যটকেরা। নদী তীরবর্তী অঞ্চল ও বাড়িগুলিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে। চাষের জমিও জলস্তরের তলায়। নদীর জল আরও বাড়লে অরক্ষিত হয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা। আতঙ্কের প্রহর গুনছেন সেই এলাকার বাসিন্দারাও।
গুয়াহাটির আন্তঃরাজ্য জলপরিবহণ বিভাগের কাছামারি ফেরি সার্ভিসের আধিকারিক বিপুল গান্ধিয়া বৃহস্পতিবার সংবাদসংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, 'অসমে একনাগাড়ে বৃষ্টিপাতের ফলে ব্রহ্মপুত্র এবং রাঙানদীর মতো ছোট ছোট নদীগুলির জলসীমাও ক্রমাগত অতিক্রম করে চলেছে।'
তাঁর বক্তব্য, 'ব্রহ্মপুত্র-সহ এই সমস্ত একাধিক নদীর জল দ্রুত বিপদসীমার উপরে বইতে দেখা যেতে পারে। এর মধ্যেই দিসপুর ও নিমাতি নদীর জল বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আরও দুই দিন জলস্তর এইরকমই বাড়তে থাকবে এবং তারপর থেকে জলসীমা কমার সম্ভাবনা।'