জানেন কি ! কলকাতা নয় সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবথেকে বড় শিবলিঙ্গ রয়েছে খোদ এই তিলোত্তমায় । আর আরো আশ্চর্যের যে, যেখানে এই শিবলিঙ্গটি বিরাজমান সেটিও বাংলার প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী সম্পদগুলির মধ্যে অন্যতম। কোথায় ? সেই বৃত্তান্তই আজ দেব।
জায়গাটি খিদিরপুর ডক সংলগ্ন ট্রামডিপো থেকে হাঁটা পথে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী সম্পদগুলির মধ্যে এই ভূকৈলাশ রাজবাড়ি অন্যতম। মহারাজা বাহাদুর জয়নারায়ণ ঘোষাল (১৭৫২-১৮২১) প্রায় ২০০বিঘা জমির উপরে ভূকৈলাশ রাজবাড়ি তৈরী করেছিলেন । তিনি কলকাতাবাসী হলেও তাঁর জন্ম হয়েছিল গোবিন্দপুরে। দক্ষ ছিলেন সংস্কৃত , হিন্দি , বাংলা , আরবি , ফারসি ও ইংরেজি ভাষায় । জানা যায় , তিনি নবাব মোবারক দৌলতের দ্বারা পাটনা , মুর্শিদাবাদ,ছোটনাগপুর ও বর্ধমানের প্রাদেশিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি দিল্লির সম্রাট আকবরের কাছ থেকে রাজকীয় অনুদান পান এবং ভূষিত হন মহারাজা ও বাহাদুর উপাধিতে । ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর কাজে খুশি হয়ে দিল্লির দরবার থেকে তাঁকে তিন হাজারী মনসবদারী পাইয়ে দেন। যার স্মৃতি বহনকারী হিসেবে আজ দুটি কামান এই রাজবাড়িতে দেখতে পাওয়া যায়। আজও রয়েছে এই রাজবাড়ি।
জয়নারায়ণ তাঁর ২০০বিঘা জমির মধ্যেই ' শিবগঙ্গা ' নামক একটি পুকুর খনন করেছিলেন। পরে ১৭৮১সালে এই পুকুরের এক পাশে দুটি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে আজও পুজো করা হয় ১১ফুট উচ্চতা সম্পন্ন কালো কষ্টি পাথরের দুটি শিবলিঙ্গ।পরবর্তীকালে ওই দুটি শিবলিঙ্গের নামকরণ করা হয় - ' রক্তকমলেশ্বর ও কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এটি শুধুমাত্র কলকাতায় নয় সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবথেকে বড় শিবলিঙ্গ। এখনো সেখানে বিশাল ধুমধাম করে পালিত হয় শিবরাত্রি।
তার ঠিক পরের বছর(১৭৮২) মহারাজা জয়নারায়ণ প্রতিষ্ঠা করেন কুলদেবী 'মা ' পতিত পাবনীর মন্দির, যার গর্ভগৃহে ওই দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তি আছে। প্রতি বছর এখানে জাঁকজমক করে দূর্গা পূজা হয় এছাড়াও মূল মন্দিরের চারিদিকে অন্য মন্দির বিদ্যমান।তবে বর্তমানে রাজবাড়িটির রাজকীয় বৈভব আর নেই। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে সংরক্ষণের বদলে তাকে পুনরায় বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হচ্ছে। বর্তমানে সেই জায়গায় রাজপরিবারের সদস্য ছাড়া আরো অনেক শরণার্থীর বাস।কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১৯৯৬এর সেপ্টেম্বরে এই রাজবাড়ি ' হেরিটেজ অফ কলকাতা ‘ বলে ঘোষণা করা হয়। তবে নিঃসন্দেহে এই রাজবাড়ি তিলোত্তমার ঐতিহ্যে এক অন্যতম সংযোজন।