স্কুল যাওয়ার সময় পছন্দ ছিল ডাবল ডেকার। বাসের সামনের দিকের সিটে জানলার পাশে বসত মেয়েটা। যাতে বাসের গতিতে ছুটে আসা বাতাস মুখে এসে লাগে। সমুদ্রের হাওয়ার ওই ঝাপটাটা খুব ভাল লাগত তার।
ষাটের দশকে অন্যতম সেরা এবং সফল নায়িকা আশা পারেখ। তাঁর সময়ে এমন কোনও হিরো ছিল না যাঁরা আশার সঙ্গে কাজ করেননি। কেরিয়ার ভর্তি হিট ছবি। ইন্ড্রাস্ট্রিতে নামই হয়ে গিয়েছিল ‘হিটগার্ল’।
কেরিয়ার শুরু করেছিলেন পঞ্চাশের দশকে। তখন শিশুশিল্পী। নাম ছিল ‘বেবি আশা’। নায়িকার ভূমিকায় দেখা গেল ষাটের দশকে। ছোট্ট থেকে নাচের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল মা। মঞ্চে নিয়মিত পারফর্মও করত। একবার একটা অনুষ্ঠানে চোখে পড়ে গেল বিমল রায়ের। তিনি তখন নিজের ছবির জন্য শিশু শিল্পী খুঁজছেন। ‘বাপ বেটি’ ছবির জন্য নির্বাচন করলেন মঞ্চে দেখা মেয়েটাকেই। সালটা ১৯৫৪।
পরবর্তী কয়েক বছরে ‘চাইল্ড আর্টিস্ট’ হিসেবে বম্বের সিনেমাপাড়ায় বেশ চেনা মুখ হয়ে উঠল ‘বেবি আশা’। ১৯৫৭-তে এল বড় ব্রেক। তার ‘স্বপ্নের রাজকন্যা’ বৈজয়ন্তীমালার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগ। ছবির নাম নাম ‘আশা’। হিট করলে সেই ছবি। আশা তখন বেশ কাঁধ ছাড়িয়েছে। ফর্সা গালে লেগেছে বয়ঃসন্ধির আভা।
‘গুঞ্চ উঠি শাহনাই’ ছবির জন্য সাইন করিয়েছিলেন বিজয় ভট। সেই ছবি থেকে বাতিল হয়ে যান। কারণ হিসেবে বলা হয় তিনি ঠিক ‘স্টার মেটিরিয়ল’ নন। কয়েক মাসের মধ্যে রাতারাতি বদলে গিয়েছিল ছবিটা। আশা পারেখ ইন্ড্রাস্ট্রির স্টার। শশধর মুখার্জীর প্রযোজনায় ‘দিল দেকে দেখো’ ছবিতে দেখা গেল তাঁকে। কেরিয়ারের পালে লাগল উজান হাওয়া। তরতরিয়ে চলতে লাগল আশার তরী। বলিউডের নতুন নক্ষত্র ‘আশা’। ‘দিল দেকে দেখো’ ছবির প্রিমিয়ারের কথা কোনদিন ভুলতে পারবেন না। কে নেই সেই অনুষ্ঠানে! রাজ কাপুর, গীতা বালি, নিরুপা রায়, ঊষা খান্না।
১৯৬৬ আশার জীবনের মাইলস্টোন। মুক্তি পেল বিজয় আনন্দের মিউজিক্যাল থ্রিলার ‘তিসরি মঞ্জিল’। বিপরীতে শশী কাপুর। জাপানে শুটিং হল ‘লাভ ইন টোকিও’ ছবির। সেই ছবি ব্লকব্লাস্টার হিট! ধর্মেন্দ্রর বিপরীতে ‘আয়ে দিন বাহার কে’। এরপর একটানা পাঁচ পাঁচটা হিট ছবি।
আজীবন অবিবাহিত আশা। জীবনে একবারই প্রেমে পড়েছিলেন। আত্মজীবনীতে নিজের কলমে লিখেওছেন সেই কাহিনি। প্রযোজক পরিচালক নাসের হুসেনের প্রেমে পড়েছিলেন। নাসের হুসেনই পরিচালনা করেছিলেন ‘দিল দেকে দেখো’ ছবিটি। আশার প্রথম ছবি। তাঁর দ্বিতীয়।
হেলেন আর ওয়াহিদা রহমান তাঁর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। তাঁর নিজের কথাতেই এই বন্ধুদের ছাড়া তাঁর জীবন অচল। আনন্দ-বেদনা সুখে দুখে সবেতে চাই সাথীদের হাত।