কৃত্রিম ধমনী তৈরি হতে চলেছে

যত দিন যাচ্ছে, আমরা ততই উন্নতি করছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করার জন্য সারা বিশ্ব জুড়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই। তেমনই একটি বিশেষ চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ, আইআইটি গুয়াহাটি এবং বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারেরা। এমন একটি বিষয় নিয়ে তাঁরা গবেষণা করছেন, যা প্রয়োগ করা হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক অভিনব দিক খুলে যাবে। যুগান্তকারী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হতে চলেছে এই গবেষকদের গবেষণার মাধ্যমে।

কৃত্রিম ধমনী তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা রেশম সিল্ক দিয়ে। তবে আশার কথা এই যে, শুধুমাত্র গবেষণার মধ্যেই রয়ে যায়নি এই ব্যাপারটি, ইতিমধ্যেই কৃত্রিম ধমনী তৈরী প্রায় শেষ। প্রাণীর ওপর তার প্রয়োগ করে গবেষণার কাজও অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছেন আইআইটি গুয়াহাটির সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ বিমান মন্ডল, আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারির প্রধান ডাঃ রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য, সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ গৌরব রঞ্জন চৌধুরী, বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারির প্রধান ডাঃ সমিত নন্দী, অধ্যাপিকা ডাঃ দেবপি ঘোষ। প্রায় আড়াই বছর আগে শুরু হয়েছে এই গবেষণা বলে জানিয়েছেন গবেষক দল। বায়ো অবজারভেবল আর্টারি বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে রেশম সিল্ক দিয়ে। যেহেতু রেশম, প্রোটিন দিয়ে তৈরী, তাই মানুষের শরীরে ব্যবহারের জন্য রেশম কে বেছে নেওয়া হয়েছে।

    এই চিকিৎসা যদি মানুষের ক্ষেত্রে সাফল্য পায়, তাহলে পাল্টে যাবে ভবিষ্যতের চিকিৎসা পদ্ধতি। বড় চোট আঘাত, বাইপাস সার্জারির মত অন্যান্য চিকিৎসায় রোগীর শরীরের অন্য ধমনী বা শিরা কেটে ব্যবহার করার প্রয়োজন অনেকটাই কমে যাবে। এমনও হতে পারে, পরবর্তীতে আর সেই প্রয়োজন হলই না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারির সময় পা থেকে স্যাফিনাস ভেইন লম্বা করে কেটে নিয়ে গ্রাফ্ট তৈরী করা হয়। সেই কাটা ভেইন বা শিরা লাগানো হয় বুকের ধমনীতে। এই কৃত্রিম ধমনী তৈরিতে সাফল্য পাওয়া গেলে কিন্তু এই রকম এক জায়গা থেকে কেটে আর এক জায়গায় লাগানোর ব্যাপার থাকবেনা। কৃত্রিম ধমনী দিয়েই সরাসরি কাজ করা যাবে।

       গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, কৃত্রিম ধমনী প্রাণীদেহে ব্যবহার করার পর ছিন্ন অংশ থেকে কোষগুলি স্বাভাবিকভাবেই কৃত্রিম ধমনীর চারপাশে বাড়তে থাকছে। কয়েকমাস পর কৃত্রিম ধমনীটি শরীরে মিলিয়েও গিয়েছে এবং স্বাভাবিক ধমনীর ছিন্ন অংশটি বেড়ে গিয়ে আগের অবস্থায় চলে এসেছে। খরগোশের শরীরে ইতিমধ্যেই এই ধমনীর ব্যবহার করে দেখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাদের ক্যারোটিড আর্টারি এবং জুগুলার ভেইন দু'টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দু'মাস পর ডপলার স্টাডি এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে ওই খরগোশের রক্ত সংবহন স্বাভাবিকই হচ্ছে এবং তারা বেশ সুস্থও রয়েছে।

     গবেষকদলের এই গবেষণা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বিশিষ্ট কার্ডিয়াক সার্জেন সত্যজিৎ বসু বলেন, নিঃসন্দেহে খুবই উল্লেখযোগ্য ঘটনা, চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতির জন্য এরকম নিরন্তর গবেষণা চিকিৎসা শাস্ত্রকে সমৃদ্ধ করছে।

     আরজিকরের প্লাস্টিক সার্জারির প্রধান ডাঃ রূপনারায়নবাবু জানান, পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত চিকিৎসায়, বিভিন্ন ধরণের মাইক্রোভাসকুলার সার্জারি এবং ক্যান্সার সার্জারিতেও এই কৃত্রিম ধমনীর ব্যবহার হতে পারে। অনুমতি পেলে আরজিকরে এরপর হিউম্যান ট্রায়াল হবে। তাতেও যদি সাফল্য পাওয়া যায়, তাহলে চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে মনে করা যেতে পারে। প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারির প্রধান ডাঃ সমিত নন্দী জানান, উপাচার্য ডাঃ পূর্ণেন্দু বিশ্বাসের সহযোগিতা তাঁদের এই গবেষণায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আইআইটি গুয়াহাটির ডাঃ মন্ডল বলেন, মানুষের শরীর এমন কিছু ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ যে তার বাইরে কিছু করা সম্ভব হয় না। তেমনই একটি সমস্যা হল রিজেকশন বা বর্জন। রেশম প্রোটিন দিয়ে তৈরী বলে তা শরীর গ্রহণ করায় সুবিধা হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্যও সকল ডাক্তারেরা আশাবাদী।

   আমরাও আশা করব চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই রকম যুগান্তকারী আবিষ্কার হোক এবং আমরা যে কোনও অসুখের ক্ষেত্রে চিন্তামুক্ত হই। 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...