বিজ্ঞানীদের অবাক করে কথা বলছে কৃত্রিম মস্তিষ্ক

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন গবেষনার কাজ রোজ চমক সৃষ্টি করছে। স্টেম সেল সংরক্ষণ থেকে শুরু করে কৃত্রিম হৃদয় তৈরি সবটাই এখন সম্ভব হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৌলতে। শুধু কৃত্রিম হৃদয় নয়। কৃত্রিমভাবে তৈরি হচ্ছে মস্তিষ্কও। সেই মস্তিষ্ক কথাও বলছে। শুনতেই অবাক লাগলেও সম্প্রতি এরকমই এক অসাধ্য সাধন হয়েছে।

মৃত মানুষের শরীর থেকে মস্তিষ্ক বা অন্য কোনো অঙ্গ বের করে, তাকে বিশেষ এক প্রকার রাসায়নিকে ডুবিয়ে রাখলে তা  সতেজ থাকে। এই পদ্ধতি আজও ব্যবহৃত হচ্ছে মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানের ক্ষেত্রে। কিন্তু সেই অঙ্গ,বলা ভালো মস্তিষ্ক আবার কথা বলতে পারে এই ধারণা কারোরই ছিল না। অবাক হওয়ার এখানেই শেষ নয়। এক্ষেত্রে অবাক করার জন্য আরও কিছু রয়েছেতা হলো, যে মস্তিষ্কটি কথা বলছে তা কোনো মৃত মানুষের নয় বরং সেই মস্তিষ্কটিও পরীক্ষাগারে তৈরী হওয়া একটি কৃত্রিম মস্তিষ্ক

সম্প্রতি জানা গেছে, সান ডিয়েগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টেম সেল ইউনিটের একটি গবেষণাগারে কথা বলতে শুরু করেছে একটি মস্তিষ্ক তাও আবার যে সে মস্তিষ্ক নয়। একেবারে গবেষকদের হাতে তৈরি রক্ত মাংসের একটি মস্তিষ্ক। অর্গানয়েডেযুক্ত মাইক্রোইলেক্ট্রোড থেকে যে সাড়া  পাওয়া যাচ্ছে তা আসলে মানুষের মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিন প্রক্রিয়ার মতোই জটিল। গবেষকরা জানান, প্রথমে এই ঘটনা বিশ্বাস হয়নি মনে করা হয়, হয়তো ইলেক্ট্রোড কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে কিংবা কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করেছে। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন, সমস্যা কোনোকিছুতেই হয়নি। সত্যিই গবেষণাগারের কৃত্রিম মস্তিষ্কটি  সাড়া দিচ্ছে।

 

 কিন্তু কোন ভাষায় কথা বলছে সেই কৃত্রিম মস্তিষ্ক?

গবেষক জানিয়েছেন, কৃত্রিম মস্তিষ্কটি বৈদ্যুতিন ভাষায় কথা বলছে। মস্তিষ্কের সমস্ত ভাবনা বৈদ্যুতিন সংকেতের মাধ্যমেই প্রকাশ করছে সেই মস্তিষ্ক মস্তিষ্কের এই বৈদ্যুতিন ভাষাকেই আমরা স্বরযন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্ত করে থাকি এই গবেষণার মূল গবেষক অ্যালিসন মুয়োত্রি জানান, দুজন পোস্ট ডক্টরাল গবেষক প্রেসিলা নেগ্রেস ও ক্লেবার ত্রুজিল্লো দীর্ঘদিন ধরেই মানবকোষ থেকে কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরী করার চেষ্টায় ছিলেন। অবশেষে সাফল্য এসেছে সেই গবেষণায়। অতীতেও বহুবার কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরির চেষ্টা হয়েছে কিন্তু  কখনো পরীক্ষাগারে বানানো কৃত্রিম মস্তিষ্ক এইভাবে বৈদ্যুতিন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। গত সপ্তাহে 'সেল স্টেম সেল' জার্নালে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  গবেষকমহলে হৈচৈ পড়ে যায়।

 

কীভাবে তৈরি হয়  কৃত্রিম মস্তিষ্ক?

 গবেষকরা জানান, একটি ছোট পেট্রিডিশে মানুষের পরিণত দেহকোষকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই কৃত্রিম মস্তিষ্ক। এক দশক আগে  শুরু হয় মিনি কৃত্রিম সেল তৈরির কাজ ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত একের পর এক যুগান্তকারী গবেষণা হয় মিনি ব্রেন তৈরির জন্য। কিন্তু  কোনোক্ষেত্রেই মস্তিষ্ক বৈদ্যুতিন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। গবেষকরা জানিয়েছেন,  ১০ মাস ধরে এই নিয়ে গবেষণার ফলে জানা গিয়েছে, এইভাবে কোষের কলোনি গঠনের মাধ্যমে এবং তার বিবর্তনের মাধ্যমে জানা গেছে, কোন কোষের বিবর্তন কিভাবে হবে। কিন্তু এইসব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে এই মিনি ব্রেনের কথা বলার ঘটনা। এই আবিষ্কারের ফলে আশাবাদী চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষকরা।  ভবিষ্যতে জটিল স্নায়ুরোগের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...