প্রায় একশ বছর আগেকার ঘটনা। আলিপুরদুয়ার জেলার জটেশ্বরের ওপর দিয়ে আমূর্চা নামের এক নদী বয়ে গিয়েছিল। জটেশ্বর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁঠালবাড়ি আর নবনগরের সীমান্তে অবস্থিত শীলঘাগরী থেকে এই আমূর্চা নদীর উৎপত্তি। ধীরে ধীরে এই নদী ক্রমশ স্রোতহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে এই নদীর তীরে কৃষিকাজ করার ফলে নদীটি আরো স্রোতহীন হয়। কৃষিজমি বিস্তার লাভ করায় আমূর্চা নদীর গতিপথ ঢাকা পড়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমূর্চা নদী পরিবর্তিত হয় জলাশয়ে। এই আমূর্চা নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে আলিপুরদূর জেলার জটেশ্বরে পূজিত হয়ে আসছেন দেবী আমূর্চা। নদীমাতৃক ভারতবর্ষে নদীকেন্দ্রিক দেবতার পুজো নতুন কিছু নয়। তবে এই দেবীকে নিয়ে আলাদা করে কোন জনশ্রুতি শোনা যায় না। স্থানীয় কেউ বলেন একবার কোনো একটি ব্যক্তি এই নদীর ধারে কাজ করতে করতে কোন কারণে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ভয় পেয়ে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন দেবী আমূর্চার কাছে তিনি মানত করেছিলেন সুস্থ হয়ে উঠলে এই নদীর তীরেই আমূর্চা দেবীর মন্দির তৈরি করে দেবেন। শোনা যায় মানত করার পর নাকি উনি সুস্থ হয়ে যান। সেই থেকে এই আমূর্চা দেবীর পুজো শুরু হয়।
মন্দির বলতে একটি চৌকো সিমেন্টের চাতাল। সেখানেই রাখা রয়েছে দেবী আমূর্চার মূর্তি। মাথায় ধূসর, আলু থালু চুল। মূর্তির হাত দুটো ভাঁজ করে রাখা থাকে। মূর্তিটির পরনে সাদা শাড়ি, ব্লাউজ। মূর্তিটির গায়ে সিঁদুরের ছাপ লাগানো।
সাধারণত কালীপুজোর দিন রাত্রিবেলা আমূর্চা দেবীর পূজা করা হয়। পুজোর উপকরণ বলতে দই, চিঁড়ে, দুধ ,খই, ঘি, মধু, আতপচাল, গঙ্গাজল লাগে। এছাড়া প্রতিবছর পূজোয় আমূর্চা দেবীর জন্যে একটা করে সাদা শাড়ি দান করা হয়।। মূলত রাজবংশী সম্প্রদায়ের লোকেরাই এই দেবীর পূজা করে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে আমূর্চা দেবীর পুজো করেন রাজবংশী পরিবারের একজন মহিলা। সারাদিন উপোস থেকে দেবীর পূজা করতে হয়। এই পুজোয় সাধারণত বলি প্রথা নেই তবে অনেকেই মানত করে পায়রা উৎসর্গ করেন। অনেকেই নিজের রোগব্যাধি নিয়ে দেরি আমর্যার থানে আসেন এখনো। সেখানে পূজারী দেবীর চরণামৃত খেতে দেন। প্রতিবছর পূজোর সময় আমূর্চা
দেবীর মূর্তি তৈরি করা হয়। শোনা যায় এক সময় আমূর্চা নদীর স্রোত যথেষ্ট বেশি ছিল। অনেকেই অসাবধানতার কারণে নদীর জলে ডুবে গিয়েছিল বা মারা পড়েছিল জলে ডুবে। অনেকেই বাড়ির পোষা প্রাণীদেরও হারিয়েছিল এই নদীর গভীরে। এছাড়াও নদীকেন্দ্রিক চাষাবাদ জীবনযাপনের কারণে এই নদী সংলগ্ন অঞ্চল গুলোর কাছে এই দেবীর অন্যরকম মাহাত্ম্য রয়েছে। নানান কারণে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মায় নদী কেন্দ্রিক জীবন যাপন করতে গেলে এই নদীর অধিষ্ঠাত্রী কোন দেবীকে সন্তুষ্ট রাখতে হয়। তাদের কাছে অনুগত থাকলেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। এভাবেই আমূর্চা নদীর পুজোর প্রচলন শুরু হয়।