১৮৮৪ তে আরিয়ান ক্লাবের প্রতিষ্ঠা। এর ঠিক ৫ বছর পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মোহনবাগান। আর ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠা ইস্টবেঙ্গলের। দুই প্রধানের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এশিয়ার মধ্যে এক সময় সাড়া ফেলেছিল লেস্লিক্লডিয়াস সরণির ক্লাবটি। ভারতীয় ফুটবলে অনন্য নজির গড়ার পাশাপাশি বহু নামী ফুটবলার উঠে এসেছেন আরিয়ান ক্লাব থেকে। একটা সময় আরিয়ান বলা হত আঁতুর ঘর। সেখান থেকেই ফুটবলাররা নাম লেখাতেন বড় ক্লাবে। এখন অবশ্য সেসব দিন আর নেই। একটা সময় ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল এই ক্লাব। বছর আটক আগে শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবটি কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিল ৪-১ গোলে। ইস্টবেঙ্গল দলে তখন কোচ হিসাবে ছিলেন ট্রেভর জেমস মরগ্যান। আর আরিয়ান কোচের দায়িত্বে ছিলেন পোর খাওয়া রঘু নন্দী। সেবার বড় ব্যবধানে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে কলকাতা ময়দানে চমক সৃষ্টি করেছিল শতাব্দী প্রাচীন এই ক্লাব। এমনকি একটি মরসুমে ৩ প্রধান ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডানকে হারিয়ে নয়া নজির গড়ার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁদের। যে রেকর্ড অন্য কোনও ছোট ক্লাবের নেই। এমনকি শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবটির কলকাতা লিগেই নয়, শতাব্দী প্রাচীন টুর্নামেন্ট- আইএফ এ শিল্ডের পাশাপাশি ডুরান্ড, ডিজিএম, রোভার্স কাপ সহ বহু টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্ম করে নজির গড়ার কৃতিত্ব রয়েছে। ১৯৪০সাল। ভারত তখনও স্বাধীন হয়নি। স্বাধীনতা লাভের বছর সাতেক আগে, আই এফ এ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ১৯৪০ সালে ফাইনালে মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী দলকে ৪-১ গোলে হারিয়ে শিল্ড জয় আরিয়ানের। দলের হয়ে নজর কাড়া ফুটবল খেলেছিল কেস্ট পাল। এরপর ৫ র দশকে এরিয়ান শিল্ড ফাইনালে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এরিয়ান শেষবার শিল্ড খেতাব ঘরে তুলেছিল ১৯৮৩-র মরসুমে। তবে একক ভাবে নয়, ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে। এরপর শিল্ডে সেভাবে আর নজরকাড়া পারফর্ম করতে পারে নি শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবটি। শুধু শিল্ডে নয়, ঘরোয়া লিগেও ব্যার্থ হয়েছিল এরিয়ান। একসময়ের যারা ৩ প্রধানের ঘুম কেড়ে নিত সেই আরিয়ান সুপার ডিভিশন থেকে নেমে যেতে হয়েছিল প্রথম ডিভিশনে। বছর দুয়েক প্রথম ডিভিশনে খেলার পর কোচ রঘু নন্দীর কোচিংয়ে ফের কলকাতা লীগের সুপার ডিভিশনে খেলার ছাড়পত্র সংগ্ৰহ করে তারা। বেশ কয়েকবছর রঘুনন্দীর কোচিংয়ে কলকাতা লীগের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স আরিয়ানের। এবার রঘুর পরিবর্তে কোচের ব্যাটম তার ছেলে রাজদীপ নন্দীর হাতে। রঘুর দেখানো পথেই রাজদীপ রেইয়ং কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। একসময় এরিয়ান ক্লাবের জার্সি গায়ে খেলার পর ভারতীয় ফুটবলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল সাহুমেয়লাল, মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, শিবাজী ব্যানার্জি, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের মতো ফুটবলাররা। এমনকি আরিয়ানের জুনিয়ার ফুটবলারদের ময়দানে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল স্যার দুখিরাম মজুমদার, অচ্যুত ব্যানার্জির কোচিংয়ের। স্যার দুখিরাম মজুমদারের কোচিংয়ে কত যে ফুটবলার উঠে এসেছেন তার তালিকা করতে বসলে শেষ করা মুশকিল। তাই তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এখন ও আরিয়ান কর্তারা দুখিরাম মজুমদারের নামে জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে একটি কোচিং ক্যাম্প চালান। আসলে দুখিরাম মজুমদার জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়েই কাজ করতে ভালোবাসতেন। তাই এখনও দুখিরাম মজুমদারের দেখানো পথকেই আদর্শ করে আগামী দিনের ফুটবলার তুলে আনার লক্ষ্যে ক্লাব কর্তাদের। শতাব্দী প্রাচীন এই ক্লাবের সেই সোনালি অতীত হয়ত আজ আর নেই। তবে পুরোনো ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে মরিয়া ক্লাব কর্তারা। পুরোনো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে কিনা তা সময়ই বলবে। তবে স্বপ্ন দেখতে বাঁধা কোথায়?