অঙ্গদানের মাধ্যমে মঙ্গলবার চার পরিবারকে এই সুতোয় বাঁধলেন সন্তোষপুরের ৪২ বছরের যুবক অপ্রতিম ঘোষ। ৪২ বছরের অপ্রতিমের মঙ্গলবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের ফলে কোমায় চলে যান তিনি। রবিবার সন্ধ্যায় পঞ্চসায়রের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর 'ব্রেন স্টেম ডেথ' ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
২১ বছরের গণেশ কুইল্যার প্ৰয়োজন ছিল হৃৎপিণ্ডের। ৩১ বছরের তারক ডোমের প্রয়োজন ছিল কিডনির। তার মা দিতে রাজি হলেও সেটা সম্ভব ছিলনা। ৪৮ বছরের স্বরূপ পালের যকৃৎ প্রতিস্থাপনের খরচ ৩০ লক্ষ টাকা জোগাড় করে উঠতে পারছিলেন না তাঁর স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী চন্দ্রানী দে পাল। আর এক জওয়ানেরও প্রয়োজন ছিল কিডনির।
এই চারটি পরিবার এক সূত্রে বেঁধে গেল মঙ্গলবার। অপ্রতিমের 'ব্রেন স্টেম ডেথ' ঘোষণা হওয়ার পর এসএসকেএম-এ অপ্রতিমের হৃৎপিন্ড প্রতিস্থাপিত হয় গণেশের শরীরে। তাঁর একটি কিডনি পেলেন হাওড়ার মল্লিকফটকের বাসিন্দা তারক এবং অপর কিডনি পেলেন আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালের এক রোগী ২২ বছরের একজন জওয়ানের শরীরে। যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে কসবার কুমোরপাড়ার বাসিন্দা স্বরূপের শরীরে। এইভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখলেন অপ্রতিম সকলের মধ্যে। তবে এর পেছনে অপ্রতিমের পরিবারের চটজলদি সিদ্ধান্তের অবদান অস্বীকার করা যায়না। তাঁর ব্রেন স্টেম ডেথ ঘোষণা করার পরপরই স্ত্রী ঈপ্সিতা ঘোষ অঙ্গদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই সিদ্ধান্তে সে ছিল মা কৃষ্ণা ঘোষেরও। ঈপ্সিতার কথা অনুযায়ী আর বছরের শিশুকন্যার বাবা অপ্রতিম নিজেও চাইতেন তাঁর অঙ্গ অন্য কারো শরীরের প্রয়োজনে লাগলে সেটা যেন করা হয়।
অপ্রতিমের দাদা অসীমাভ ঘোষ জানান, শনিবার রাতে ভাইয়ের প্রচন্ড মাথার যন্ত্রনা শুরু হয়। পরদিন সকালেও ব্যাথা না কমায় অপ্ৰতিমকে ভর্তি করানো হয় বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তবে ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগী কোমায় চলে যান। মস্তিষ্কের অনেক অংশ জুড়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তাই চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। তবে সরকারি হাসপাতালে একসঙ্গে হৃৎপিন্ড, যকৃৎ, কিডনি প্রতিস্থাপন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসএসকেএম-এর ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অস্ত্রোপচারের পরে তিনজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মানুষের স্বার্থে সকলে মিলে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন এই হাসপাতাল বলেও জানান তিনি।