কমলকুমারের অঙ্ক ভাবনা

অঙ্কের জন্য বাংলায় একটা আস্ত পত্রিকা। আগে কোনওদিন কেউ ভেবেছিল কিনা জানা নেই, তবে তিনি ভেবেছিলেন। নিজে সাউথ পয়েন্ট ইস্কুলের শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি ফিল্ম ক্লাব তৈরি করেছিলেন। সাহিত্যের প্রবাদ নাম, সেই তিনিই দিশা দিয়েছিলেন বাংলা ভাষায় গণিত চর্চার মৌলিক প্রবন্ধ প্রকাশে।
পত্রিকার নাম ‘অঙ্ক ভাবনা’। অঙ্ক বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা। পত্রিকার দুই সম্পাদক। আনন্দমোহন ঘোষ আর তিনি। কমলকুমার মজমুদার।

প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা প্রকাশ পায় ১৯৬৫ সনের ১ জানুয়ারি। প্রচ্ছদ চিত্রে প্রাচীন ঈজিপ্তীয় বাটখারা।
কমলকুমার মজুমদার কর্ত্তৃক ম্যাণ্ডেভিলা গার্ডেনস থেকে প্রকাশিত। ছাপা হয়েছিল রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের মর্ডান ইন্ডিয়া প্রেস থেকে।

anka vabna

প্রতি তিন মাস অন্তর বছরে চারটি সংখ্যা প্রকাশ করার পরিকল্পনা করা হয়। পত্রিকার দাম ১ টাকা ৭৫ পয়সা।
লীলাবতীর অনুবাদ দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রথম সংখ্যার পাঠ। পরের পর পাতায় অঙ্ক, অঙ্ক আর অঙ্ক। প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চার রূপটিকে তুলে ধরা হয়েছিল পাতায় পাতায়। অঙ্কের জটিল গতি এসে যেখানে থামত সেখানে এসে চোখ টেনে নিত পাতা শেষের অলংকরণ।

প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের গণিতচর্চার ধারাও মিশেছিল পত্রিকার নিবন্ধ নির্বাচনে। অঙ্ক বিষয়ে মৌলিক গবেষণা বা রিসার্চ পেপার বাংলা ভাষায় প্রকাশ পেত এই পত্রিকায়। ‘ত্রৈমাসিক অঙ্ক ভাবনা’ প্রকাশের অন্যতম উদ্দ্যেশ্য এটাই। বাংলা ভাষায় গণিত শাস্ত্রের মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধগুলো এই পত্রিকাতেই প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধগুলোর মান এতটুকু ঋদ্ধ ছিল যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাই সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে মনে হবে। মূলত গণিতের ছাত্র ও বিশেষজ্ঞরাই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।

১৮১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরের মিশনারি কর্তৃক প্রকাশিত ‘দিগদর্শন’ পত্রিকায় প্রথম বাংলায় বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানবিষয়ক প্রথম পত্রিকা ‘বিজ্ঞান সেবধি’ প্রকাশিত হয় ১৮৩২ সালে। পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল Society for translating European sciences সংস্থার অর্থানুকূল্যে। কিন্তু এক বছর চলার পর ‘বিজ্ঞান সেবধি’ বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৪২ ও ১৮৪৩ সাল থেকে অক্ষয়কুমার দত্ত সম্পাদনায় ‘বিদ্যা দর্শন’ ও ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় নিয়মিত বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে।

১৯৪৮ সালে বিজ্ঞানী সত্যেন বসু, মেঘনাথ সাহার উদ্যোগে, মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার লক্ষ্যে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ গঠিত হলে, পরিষদের মুখপাত্র ‘জ্ঞান-বিজ্ঞান’, বাংলায় বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা প্রকাশের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে সাধারণমুখী করার উদ্যোগ। কিন্তু শুধু গণিত নিয়ে সামগ্রিক পত্রিকা প্রকাশের ভাবনা কমলকুমারের একেবারেই নিজস্ব চিন্তার ফসল বলা যায়। অথচ প্রথাগত বিজ্ঞান শিক্ষার অতীত তাঁর ছিল না। বিজ্ঞানের ছাত্র আনন্দমোহন ঘোষকে পত্রিকার কাছে সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে তিনি এক দুরূহ কাজের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। অপরিসীম প্রত্যয় ছিল তাঁর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী, এবং তিনি সফল হয়েছিলেন। একথাও বলা যায় নিঃসন্দেহেই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...