বাগবাজারের রাধা মদনমোহন মন্দির

কলকাতার বুকে বাগবাজারের রবীন্দ্র সরণিতে অবস্থিত রাধা মদনমোহন মন্দির। ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গোকুল চন্দ্র মিত্র। তার বাবা সীতারাম মিত্র আদিতে ছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা। কলকাতায় লবণ ব্যবসা করে শহরের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন গোকুল চন্দ্র মিত্র। তাঁর অচল বিশ্বাস ছিল মদনমোহনে। বিশ্বাস করতে, বিষ্ণুপুর থেকে আনা মদনমোহনের বিগ্ৰহই তাঁর ভাগ্য খুলে দিয়েছিল। এই মদনমোহনের বিগ্ৰহটি প্রথমে গোকুল চন্দ্র মিত্রের কাছে ছিল না। বিষ্ণুপুরের মহারাজ বীর হাম্মির একবার এক ব্রাক্ষ্মণের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। সেখানেই ছিল মদনমোহনের এই বিগ্ৰহটি। ভগবানের এই মূর্তিটি দেখে রাজা মুগ্ধ হয়েছিলেন। তখন সেই ব্রাহ্মণকে তিনি এই মূর্তিটি তাঁকে দিতে বলেন। তার জন্য  অর্থ ব্যয় করতেও রাজি ছিলেন রাজা। কিন্তু ব্রাহ্মণ  রাজী হননি। তখন রাজা তাঁকে না বলেই মূর্তিটি নিয়ে চলে যান। মূর্তিটি বিষ্ণুপুরের রাজ বাড়ির লক্ষ্মীগৃহে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তারপর ১৬৯৪ সালে মল্লরাজ দুর্জন সিংহ বিষ্ণুপুরে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।  সেখানেই মদনমোহনের বিগ্ৰহটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

radha madan

তবে বিষ্ণুপুরে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি মদনমোহনের বিগ্রহ। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ তার পরিবারের সদস্য দামোদর সিংহের সঙ্গে সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় জড়িয়ে পড়েন। এই মামলার খরচ চালাতে ঋণগ্ৰস্থ হয়ে পড়েছিলেন রাজা। তাই বাধ্য হয়েই মদনমোহনের মুর্তিটিকে কলকাতার নুন ব্যবসায়ী গোকুল চন্দ্র মিত্রের কাছে বন্ধক রাখতে হয়েছিল। পরে অবশ্য আবার তিন লক্ষ টাকা নিয়ে বিগ্ৰহটি গোকুল মিত্রের থেকে আনতে গিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের মহারানী। কিন্তু তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন গোকুল চন্দ্র। শোনা যায়, গোকুলচন্দ্র মিত্র হুবহু একই রকম দেখতে একটি মূর্তি তৈরী করিয়েছিলেন। আসল মূর্তিটি নিজের কাছে রেখে বিষ্ণুপুরের রাজাকে নতুন তৈরী মূর্তিটি দিয়েছিলেন তিনি।



গোকুল মিত্রের ঠাকুরবাড়িতে আজও পূজিত হন মদনমোহন। সেখানেই রয়েছে আসল মূর্তিটি। প্রায় দেড় বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এই ঠাকুরবাড়িতে রয়েছে একটি চাঁদনি আকৃতির নাটমন্দির। শহরে এই ধরনের নাটমন্দির প্রায় নেই বললেই চলে। নাটমন্দিরে রয়েছে একটি বিরাট হল ঘর যেখানে অধিষ্ঠিত থাকেন মদনমোহন, রাধিকা ও তার দুই সখী। বৈষ্ণবদের জন্যে খুবই পবিত্র এই ঠাকুরবাড়ি। প্রত্যেক বছর দোল, রাধাষ্টমী, রাসযাত্রা, ঝুলন, অন্নকূট উৎসব পালন করতে মদনমোহনের ভক্তরা আসেন এখানে। বিশেষ করে অন্নকূট উৎসবের সময় ভক্তদের দিকে মদনমোহন ও রাধিকার অন্ন-ভোগ ছোড়া হয় ভক্তদের দিকে। এই সময় ভিড় জমে যায় ঠাকুরবাড়ির সামনে। প্রত্যেক দিন সকাল সাতটা থেকে বারোটা ও বিকেল পাঁচটা থেকে আটটা পর্যন্ত ভক্তরা মদনমোহনের দর্শন করার সুযোগ পান।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...